বুধবার, অক্টোবর ৯, ২০২৪
দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা বরখাস্ত
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ

দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা বরখাস্ত

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : November 13, 2023 | অপরাধ

দুর্নীতির বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ দাবির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শেখ কাওছার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক। গত ১১ নভেম্বর স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির বৈঠকে তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়।

তার বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয়ের খাত থেকে ২ কোটি ৮৫ লাখের বেশি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি স্কুলের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এ প্রমাণ মেলে।

একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে জাল সনদের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়কে নিয়োগ দেয়া, এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়ে চাঁদা দাবি, নারী শিক্ষকদের নিপীড়ন এবং জমির ব্যবসায়ে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম অনুর স্বাক্ষর করা নোটিশে বলা হয়, শেখ কাওছার আহমেদ ২০১২ সালের ৩১ মে থেকে সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম উত্থাপিত হয়, যা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তের ১০নম্বর আলোচ্যসূচিতে ছিল। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অডিট করা হয়। অডিট টিম ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের আর্থিক তথ্য-উপাত্ত চাইলে কাওছার আলী তা দেননি। অডিটে সহযোগিতাও করেননি।

এতে আরও বলা হয়, অডিট টিমের জমা দেয়া প্রতিবেদনে ২০১৫-২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে আয়ের খাতে ১ কোটি ৪২ লাখ ৭ হাজার ৪৮৯ টাকা এবং ব্যয়ের খাতের ১ কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৫০ টাকা দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমপিওভুক্তির নামে অর্থ আত্মসাৎ এবং ২০২০ সালে শিক্ষকদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ নিয়ে তাকে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

নোটিশে উল্লেখ হয়, আর্থিক দুর্নীতি, জাল সনদের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়কে নিয়োগ দেয়া, এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়ে টাকা আদায় নারী শিক্ষকদের নিপীড়ন, প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় না দিয়ে জমি ব্যবসায়ে নিজে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ‘স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের চাকরির শর্ত বিধিমালা ১৯৭৯’ অনুযায়ী মো. শেখ কাওছার আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। একই সঙ্গে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা সব টাকা অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানতে চাইলে শেখ কাওছার আহমেদ প্রতিষিদ্ধকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে এবং তাদের খেয়াল-খুশি মতো অডিট ফার্ম নিয়োগ করে কথিত অডিট করানো হয়। অডিট প্রতিবেদন দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে এটা পক্ষপাতমূলক। অর্থবছর ধরে অডিট করা হয়। অথচ তারা সাল ধরে ধরে অডিট করেছেন। আমি একটি মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার।

সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম অনু বলেন, এখানে ষড়যন্ত্র বা ফাঁসানোর কোনো সুযোগ নেই। ম্যানেজিং কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে অডিটের সিদ্ধান্ত হয়। অডিট কারা করবে, সেটাও সেখানে সিদ্ধান্ত হয়। অডিট হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ফলে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ দাবিতে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে গত ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এমপিও শিক্ষকরা। এতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ।

টানা ২৩ দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করেন তারা। ১ আগস্ট রাতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে শিক্ষকদের জাতীয়করণ বা বৈষম্য নিরসনের আশ্বাসে অনশন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।

ওই আন্দোলন চলাকালে সরকারের রোষানলে পড়েন নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষক নেতারা। বিটিএ নেতাদের অভিযোগ, শিক্ষকদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করায় কাওছার আহমেদকে ওপর মহলের নির্দেশে ফাঁসানো হচ্ছে। একই সঙ্গে জাতীয়করণ দাবি নিয়ে এখনো কথা বলায় তার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি অন্য শিক্ষক নেতাদেরও ভয় দেখাতে এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে।

আরো দেখুন:

মাদরাসা সুপারের সঙ্গে শিক্ষিকার অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল

 

প্রতিষিদ্ধ/ওএফ