শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
আবাসন সেক্টরে প্রচলিত ধারণা বদলে দিতে সুপার হোমের পথচলা
 চীনা নাগরিক জিমিন ঝাং (জিমি) ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার

আবাসন সেক্টরে প্রচলিত ধারণা বদলে দিতে সুপার হোমের পথচলা

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
প্রকাশের সময় : November 24, 2021 | সমস্যা ও সম্ভাবনা

সেবা মূলক এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্পমূল্যে ব্যাচেলরদের জন্য ২৫টিরও বেশি সুবিধা ইতোমধ্যেই উপভোগ করছেন অসংখ্য ব্যাচেলর

২০১৪ সালে  চীনা নাগরিক জিমিন ঝাং (জিমি) ও ঝ্যাং লি গুয়াং (নেলসন) ২ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। এরপর ঢাকায় থাকার উদ্দেশ্যে তখন তারা বাসাভাড়া খুঁজতে গেলে তারা ব্যাচেলের হওয়ার কারণে বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দিতে আপত্তি জানায়। সে থেকেই তাদের মাথায় সুপার হোমের ধারণা মাথায় আসে। সেবা মূলক এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্পমূল্যে ব্যাচেলরদের জন্য ২৫টিরও বেশি সুবিধা ইতোমধ্যেই উপভোগ করছেন অসংখ্য ব্যাচেলর। কম খরচে আমরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবাসন, তিন বেলা খাবার, স্বাস্থ্যসম্মত পানি, পরীক্ষা করা খাবার, ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যের ওয়াইফাই, ২৪ ঘণ্টার সিসি ক্যামেরা, ব্যক্তিগত লকার, জিম, রিডিংরুম সুবিধাসহ ৩০ ধরনের সেবা দিচ্ছি।’
সুপারহোমে ব্যাচেলর ও শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার, জিমনেশিয়াম, লবি, কাপড় ধোয়াসহ সকল সার্ভিস পাওয়া যায় খুব সহনীয় মূল্যে। সাবান-টুথপেস্টসহ আরো ক্ষুদ্র প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যোগানও দিয়ে থাকে সুপার হোম। 
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিমি বলেন, ভবিষ্যতে ঢাকায় প্রায় ১০০ টি শাখা খোলার পরিকল্পনা করছে সুপার হোমের মূল প্রতিষ্ঠান নিউওয়েজ। তিনি বলেন সকল বিপত্তি ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমরা আমাদের আপন লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাই। সুপার হোমের সঙ্গে অন্য কোন ব্যবসায়িক উদ্যোগের পরিকল্পনার ব্যপারে জিমি বলেন, আপাতত আমরা সুপার হোমকে প্রসারিত করার কাজেই মনোনিবেশ করছি, বাকিটা সময় বলে দিবে। 
এদিকে সুপার হোমের মূল ধারণার প্রবক্তা ঝ্যাং লি গুয়াং (নেলসন) খুবই চিন্তাশীল ব্যাক্তিত্ব। তার প্রতিটি চিন্তায় আছে বৈজ্ঞানিক প্রবাহ। নেলসন বলেন, আমরা যখন একটি পরিবারের জন্য একটি টিভি, এসি ক্রয় করি তখন পরিবারের সদস্যরা কিছু সেগুলো ব্যবহার করলেও অধিকাংশ সময় সেগুলো অব্যবহৃত পড়ে থাকে। কিন্তু সুপার হোমে একটি টিভি ও একটি এসি যথাক্রমে বহুলোক ব্যবহার করে। তাই একদিকে যেমন জিনিসগুলো অব্যবহৃত পড়ে থাকে না, অন্যদিকে একটি জিনিসে বহুলোক সেবা পেয়ে যাচ্ছে। একাধিক জিনিসের সেখানে প্রয়োজন হচ্ছে না। আমরা বাজার বা মুনাফার দিকে না তাকিয়ে আগে সেবার মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছি। কাজ করলে স্বীকৃতি আসবে। বাজারও তৈরি হবে। মুনাফাও অর্জিত হবে।
নেলসন বলেন, সবাই ব্যবসা করে নিজে লাভবান হতে চায়, সবকিছু নিজেই পেতে চায়। কিন্তু ‘আমি সমাজকে কী দিলাম’ এ চিন্তাটি কেউ করেন না। তিনি বলেন আমরা যখন একটি বাস কিংবা বিমানে ভ্রমণ করি তখন আমরা কেবল একটি টিকিট সংগ্রহ করি, বাসটি কিন্তু আমারা কিনে ফেলি না। সেখানে বসার জন্য চেয়ার বা বাতাসের জন্য পাখা বা এসি আমরা নিয়ে যাই না। সব সেখানেই থাকে। একটি গাড়ীতে আমরা ২-৩ ঘণ্টা থাকি। কিন্তু আমারা আমাদের যে আবাসস্থলে সবচেয়ে বেশি সময় থাকি তার ব্যপারে ব্যতিক্রম ধারণা কেন, সুপার হোম এমন সামাজিক ভ্রান্ত ধারণাকে পরিবর্তন করেতে চায়। যার জন্য আমাদের প্রত্যেকের মাঝে যে অনুসরণ প্রবণতা রয়েছে তা দূর করতে হবে। 
তিনি বলেন, আমরা ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল ফোন কিনলে ফোনের মালিক মুখমণ্ডল দেখালেই তার পেজ লক খুলে যায়, অথাৎ মাত্র ১০ হাজার টাকার একটি ফোন তার মালিককে চিনতে পারে। কিন্তু ১০ কোটি টাকায় আমরা একটি বাড়ী বানালে সে বাড়ীর দরজা কী তার মালিককে চেনে? সুতরাং আবাসন খাতে আমরা অনেক প্রাচীন ধারণা পোষণ করে আছি। সুপার হোম মোবাইল ফোনের মতো এমন উন্নত প্রযুক্তি আবাসন খাতেও নিয়ে আসতে চায়। যাতে প্রযুক্তির সহায়তায় আমাদের আবাসস্থলও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে পারে। আবাসস্থলের প্রতিটি কোণেও প্রযুাক্তির ছোঁয়া লাগিয়ে দিতে চায় নিউওয়েজের বিস্ময় আবিস্কার সুপার হোম।                       
নেলসন আরো বলেন, আমরা যখন একটি রেস্তোরায় খেতে যাই তখন খাবারের প্লেটটি আমাদের পরিস্কার করে দিয়ে যেতে বলা হয় না। আমারা শুধু সেখানে খাবারের বিলটি প্রদান করি। অথচ আমরা যখন একটি বাসা ভাড়া করে থাকি সেখানে আমাদের যেমন ভাড়া দিতে হয় একই সঙ্গে আমাদের বাসা পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও নিতে হয়। গুয়াং সামাজিক এমন ধারণাকে ভ্রন্ত বলে মনে করেন। সকল সেবার ক্ষেতে তিনি এক নীতিতে বিশ্বাস করেন।সুপার হোমের বাসিন্দাদের ৭০ শতাংশই শিক্ষার্থী। সুপার হোম শিক্ষার্থীদের যেমন সুবিধা দিয়ে তাদের পথচলা শুরু করেছে ধীরে ধীরে এমন সুবিধা আরো প্রসারিত হবে। 
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চালু হওয়া সুপার হোমের বর্তমান শাখা ছয়টি। উত্তরা, বারিধারা, উত্তর বাড্ডা, শাহবাগ এবং মিরপুরে-২ নাম্বারে দুইটি শাখা চালু রয়েছে ‘সুপার হোম’র। এরমধ্যে মিরপুর-২ নাম্বারে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের জন্যও রয়েছে একটি ‘সুপার হোম’।