রবিবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২৫
পুলিশের গুলিতে ছিন্নভিন্ন ইয়ামিনের স্বপ্ন: লাশ দাফনেও বাঁধা
পুলিশের গুলিতে ছিন্নভিন্ন ইয়ামিনের স্বপ্ন: লাশ দাফনেও বাঁধা

পুলিশের গুলিতে ছিন্নভিন্ন ইয়ামিনের স্বপ্ন: লাশ দাফনেও বাঁধা

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : August 26, 2024 | গণমানুষের কথা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়া ঢাকার সাভারের প্রথম শহীদ শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন। ইচ্ছে ছিল উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাবেন, ফিরে এসে শিক্ষকতা করবেন নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমআইএসটিতে। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি ইয়ামিনের। গত ১৮ জুলাই দুপুরের পর পুলিশের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হলেও তাকে বাঁচতে দেয়া হয়নি। মুমূর্ষু অবস্থায় পুলিশের সাঁজোয়া যানে করে ঘুরানো হয় তাকে। একপর্যায়ে মৃত ভেবে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়া হয় সাঁজোয়া যান থেকে। সেই দৃশ্য ভাইরাল হয়ে যায় গোটা নেট দুনিয়ায়।

প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে পুলিশের সাঁজোয়া যানের সামনে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ইয়ামিন। তখনই গুলিতে ঝাঁজরা করে দেয়া হয় তার বুক। গুলিবিদ্ধ মুমূর্ষু ইয়ামিনকে সাঁজায়ো যানেই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একপর্যায়ে ফেলে দেয়া হয় সড়কে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। একদফা দাবিতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে শেখ হাসিনার মসনদ। ইয়ামনিকে হারানোর পরও বিজয় গৌরবে গর্বিত তার পিতা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন।

সেই বিভৎস ও ভয়াল স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো শহীদ; তাই আমি তাকে গোসল ছাড়াই দাফন করেছি। আমি আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য প্রশাসনের কারও কাছেই কোনো বিচার চাই না। কার কাছে বিচার চাইব, যে পুলিশ আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, তারা কি করবে আমার ছেলের হত্যার বিচার!’

ইয়ামিনের বাবা বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর পর তাকে দাফন করতে গিয়েও আমাকে পড়তে হয়েছে নানা বিড়ম্বনায়। প্রথমে কুষ্টিয়ায় আমার গ্রামের বাড়িতে দাফন করানোর উদ্দেশ্যে রওনা দিলে আমার আত্মীয়রা জানায় স্থানীয় থানা পুলিশ তাদের বলেছেন, তাদের অনুমতি ছাড়া সেখানে কাউকে দাফন করা যাবে না। পরবর্তী সময়ে সাভারের তালবাগে ইয়ামিনের নানা-নানির কবরের পাশে দাফন করতে চাইলে সেই গোরস্তানের কর্তৃপক্ষ জানায়, ময়নাতদন্ত ছাড়া করতে গেলে পুলিশি ঝামেলা হবে। পরে বাধ্য হয়ে ব্যাংক টাউনের এই গোরস্তানে আমার ছেলেকে দাফন করি।’

তিনি আরো জানান, ‘আমার ছেলের হত্যার পুরো দৃশ্যটি আপনারা সবাই দেখেছেন। একজন গুলিবিদ্ধ জীবিত মানুষকে কি কেউ এমনভাবে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় ফেলতে পারে। তখনো যদি আমার ছেলেকে হাসপাতালে নেয়া হতো হয়তো প্রাণ বেঁচে যেত। কিন্তু আমার মুমূর্ষু ছেলেকে চিকিৎসার সুযোগটিও দেয়নি তারা। আমার ছেলে এবং আমার পুরো পরিবার কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমার ছেলে রাজনীতিকে পছন্দ করত না। আমার শ্বশুর একজন মুক্তিযোদ্ধা। সেই হিসেবে আমার ছেলেও একজন মুক্তিযোদ্ধার নাতি হিসেবে কোটা সুবিধা ভোগ করতে পারত; কিন্তু সে-ও চেয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য না থাকুক। সে তার আহত বন্ধুদের নিয়ে খুব চিন্তিত এবং বিমর্ষ থাকত। আর সেজন্যই সে সেদিন তার আহত বন্ধুদের বিচারের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। এই দেশের সরকারের যদি দয়া হয়, তবে এক দিন আমার ছেলে হত্যার বিচার করবে।’

মহিউদ্দিন বলেন, ‘মনে হচ্ছে এখন আমার বেঁচে থাকাটাই বৃথা। প্রতিদিনই নিয়ম করে আমার কলিজার টুকরা ইয়ামিনের সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্মৃতি মনে করি।’