শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
সাহিত্যে পৃষ্ঠপোষকতা ও বাণিজ্যিক চাহিদায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আশাব্যঞ্জক নয়
রেশমা আক্তার

সাহিত্যে পৃষ্ঠপোষকতা ও বাণিজ্যিক চাহিদায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আশাব্যঞ্জক নয়

প্রকাশের সময় : March 11, 2022 | ফিচার

রেশমা আক্তার বর্তমান প্রজন্মের একজন উদীয়মান লেখক। সম্প্রতি তার একটি গ্রন্থ ‘অণিমা’ প্রকাশ পেয়েছে। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা এ লেখক হস্তশিল্প ও কারুপণ্য নিয়েও একসময়ে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানেও। তার সৃজনশীল কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি প্রতিষিদ্ধের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে যুক্ত হন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রতিষিদ্ধের বিশেষ প্রতিবেদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার। 

প্রতিষিদ্ধ: বর্তমানে আপনি কী ধরণের লেখা লিখছেন?

রেশমা আক্তার:  আমি লিখছি মূলত গল্প ও উপন্যাস। 
 
প্রতিষিদ্ধ: কত সময় ধরে আপনি সৃজনশীল লেখার সঙ্গে জড়িত?

রেশমা আক্তার:সময়টা আসলে একটানা বলা যাবে না।আমার সৃজনশীল লেখালেখির হাতেখড়ি কৈশোরে। ১৯৯৪ সালে স্কুল জীবনে একটা কিশোর ম্যাগাজিনে প্রথম আমার লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি ছোটগল্প 'ভোরের শপথ' প্রকাশিত হয়। এর পরে এভাবেই বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পত্র পত্রিকায় কিছু কিছু লেখা প্রকাশ হতে থাকে। কলেজের পর লেখালেখিতে বেশ খানিকটা বিরতি দিলেও পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুনরায় যাত্রা শুরু হয় এবং আমার লেখাগুলো পাঠক সমাদৃত হতে থাকে। এরপর আর কলম থামেনি। পাঠকদের চাহিদা পূরণেই লিখে আসছি এ পর্যন্ত।

প্রতিষিদ্ধ: আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে, এবং প্রকাশনায় বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কেমন দেখেন?

রেশমা আক্তার:এবারের 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা- ২০২২' এ প্রথমবারের মত আমার লেখা উপন্যাস 'অণিমা' বই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। এটিই আমার প্রথম প্রকাশিত বই। আমি অত্যন্ত আনন্দিত কারণ, 'অণিমা' ইতোমধ্যেই পাঠক সমাদৃত হয়েছে। বই মেলার মাঝামাঝিতে বইটির প্রথম প্রকাশের মুদ্রিত সংখ্যা প্রায় শেষ। বইটি এখন দ্বিতীয় মুদ্রণের অপেক্ষায়। সুতরাং প্রকাশনার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে আমি আশাবাদী।

প্রতিষিদ্ধ: আপনি পেশাগত ভাবে কী করছেন?

রেশমা আক্তার: বিগত দিনে বিভিন্ন সময়ে আমি বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে লেখালেখিকেই আমি পেশা হিসেবে নিতে চাই। সুতরাং আমি নিজেকে একজন লেখক হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব।

প্রতিষিদ্ধ: সাহিত্যে পৃষ্ঠপোষকতা ও বাণিজ্যি চাহিদায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী?

রেশমা আক্তার: প্রশ্নটা একটু কঠিন হয়ে গেল। আমি বলব, সাহিত্য পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাণিজ্যিক চাহিদায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক নয়। তবে আশা যে একেবারেই নেই তা বলা যাবে না। কারণ সরকারি অনুদানে, বাংলা একাডেমির আনুকূল্যে সমৃদ্ধ, সৃষ্টিশীল লেখা বই হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারি অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক  অঙ্গনে আমাদের সৃষ্টিশীল কাজ  সন্মান কুড়িয়ে আনছে। তবে এ ধারাবাহিকতা আরও উন্নত হবার অবকাশ রয়েছে। আমাদের  তরুণ প্রজন্মেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উজ্জীবিত  করতে পারলে সাহিত্যে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে বলে আমি মনে করি।

প্রতিষিদ্ধ: আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।

রেশমা আক্তার:  নিজের সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলার নেই আমার।  আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক (সন্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছি। এরপর বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি কিছুকাল। এরপর উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেছি হস্তশিল্প ও কারুপণ্য নিয়ে। পাশাপাশি সবসময় লেখালেখির অভ্যাসটা ছিলই। সৃষ্টিশীল কাজে  আমি কখনই ক্লান্তিবোধ করি না।

প্রতিষিদ্ধ: বর্তমানে উদীয়মান লেখকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

 রেশমা আক্তার:  সর্বকালে, সর্বযুগে অমিত সম্ভাবনার আধার তরুণ সমাজ। তাদের  সম্ভাবনা অপার। বর্তমানে তরুণ লেখকদের প্রতি পরামর্শ হল, তাদের সৃষ্টির মাঝে বাস্তব জীবনবোধটা যেন থাকে। কারণ আমি মনে করি, সাহিত্য হল জীবনের আয়নার মত। মানুষ যেন সাহিত্যে তাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। মানুষ যেন তাদের লেখা পড়ে বিভ্রান্ত না হয়।

প্রতিষিদ্ধ: আপনি এ পর্যন্ত কী কী বিষয়ের উপর লিখেছেন?

রেশমা আক্তার: আমার লেখার প্রধান উপজীব্যই মানুষ ও মানুষের মনোজগত। বর্তমানে পরিবর্তনশীল বিশ্বায়নে দ্রুত ধাবমান সভ্যতায় মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, অবক্ষয়, ক্রান্তি, ভাঙন এবং স্থুল স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বৃহৎ স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার যে প্রতিযোগিতা এসব বিষয় আমাকে ভাবায়। আমি আমার লেখনীতে গল্পের ছদ্মবেশে মানুষের সত্যিকার জীবনবোধটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।

প্রতিষিদ্ধ: লেখালেখি বা সাহিত্যে আপনার চাহিদা কী?

রেশমা আক্তার: লেখায় একজন লেখকের চাহিদা থাকে দু' রকম। প্রথমত, আমি আমার লেখায় নিজের ভাবনা, নিজের সত্য, নিজের দর্শনের প্রতিফলন ঘটাতে চাই। দ্বিতীয়ত, পাঠকের সুস্থ, পরিশীলিত বিনোদোন, তাদের জন্য ইতিবাচক বার্তা বা শিক্ষণীয় আদর্শের নির্দেশনা দিতে চাই। 

প্রতিষিদ্ধ: ভবিষ্যতে লেখালেখি নিয়ে আপনি কেমন আশাবাদী?

রেশমা আক্তার: আমার লেখার উপজীব্য মানুষ ও জীবন ঘনিষ্ট উপাদান। সাধারণ জীবনের কথামালা  আমি শিল্পের আঁচড়ে রাঙ্গিয়ে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে চাই। তার সাথে জড়িয়ে আছে পরিশীলিত শিল্প ও রুচিবোধ। আমি আশা করি পাঠক একারণেই আমার লেখা পছন্দ করছে ভবিষ্যতেও করবে। আর এভাবেই আমার সৃষ্টি  মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারবে বলে আমি আশাবাদী।