বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
কেবল হাঙ্গেরি থেকেই সহজে ইউরোপের ২৬ দেশে যাতায়াত করা যায়
ফারজানা করিম

কেবল হাঙ্গেরি থেকেই সহজে ইউরোপের ২৬ দেশে যাতায়াত করা যায়

প্রকাশের সময় : April 11, 2022 | ঢাকা

ফারজানা করিম,  চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী, ইউকা এডুকেশন অ্যান্ড ট্রাভেলস

ফারজানা করিম একজন স্টুডেন্ট ভিসা কনসালটেন্ট। শিক্ষকতাকে প্রাণে লালন করলেও বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার জন্য যারা বিদেশ গমন করার ইচ্ছে করেন তাদের সহযোগিতা ও গাইডলাইন প্রদান করে যাচ্ছেন গত কয়েক বছর ধরে। এছাড়াও ফারজানা করিম একজন প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী। একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিদেশে যেকোন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ^বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যস্থতা করার মতো জটিল কাজটিই করে যাচ্ছেন ফারজানা করিম। তিনি বলেন ২০১১ সালের দিকে তিনি যখন স্কলারস স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন তখন একটি ট্রাভেল এজেন্ট থেকে তার কাছে বিদেশে পড়তে যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দেয়, সে থেকেই আজ অব্দি তার পথচলা। তিনি ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশে গমনের প্রক্রিয়া, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নিয়ে কথা বলেন প্রতিষিদ্ধ’র সঙ্গে। ফারজানা করিমের সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন প্রতিষিদ্ধ’র বিশেষ প্রতিবেদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার। 

বর্তমানে কোন দেশটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকূলে এবং সহজলভ্য সে ব্যপারে জানতে চাইলে ফারজানা করিম বলেন, হাঙ্গেরি ইউরোপের সেনজেনভুক্ত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী একটি রাষ্ট্র। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট যা হাঙ্গেরির বৃহত্তম শহর ও দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত। পৃথিবীতে উন্নত, সুন্দর ও বসবাসযোগ্য শহরের মধ্যে বুদাপেস্ট অন্যতম। হাঙ্গেরি থেকে অন্যান্য নিকটবর্তী দেশগুলো হচ্ছে জার্মানি, অষ্ট্রিয়া, রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়া। হাঙ্গেরি ঘঅঞউ, ঊট, উঊঈউ সদস্যভুক্ত একটি দেশ।

পৃথিবীর বুকে অন্যতম বেশ কিছু প্রাচীন বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হাঙ্গেরিতে অবস্থিত যেগুলো ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং এ প্রথম সারির দিকে এবং তাদের পড়াশোনার অনবদ্য ও সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। খুব কম খরচে ইউরোপের এই দেশে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ শিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। এখানে ইংরেজি ভাষা ও হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পড়াশোনা পরিচালনা করা হয়।

সুযোগ সুবিধা:

১। টিউশন ফি ইউরোপের অন্যান্য দেশের থেকে অনেক কম।

২। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের উন্নত ল্যাব, রিসার্চ ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। যা পড়াশোনা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরিতে নিয়োগে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে।

৩। হাঙ্গেরিতে পড়াশোনার পাশাপাশি রয়েছে পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ যা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পড়াশোনা ও আবাসন খরচ মিটাতে পারে এবং বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ছুটির সময়ে ফুল-টাইম কাজের সুযোগ পায়।

ফারজানা করিম বলেন, বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষস্থানীয় দেশের মধ্যে রয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এসব দেশের পড়াশোনা খরচ অনেক বেশী হওয়ায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পরিবারে পক্ষে প্রায়শই বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত বছরে উক্ত দেশেগুলোর ভিসা দেয়ার পরিমাণ খুব কম এবং খুবই উদ্বেগজনক। অপর পক্ষে হাঙ্গেরি সবসময় বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি খুবই বন্ধুশুলভ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছে তাদের মেধা দিয়ে।

হাঙ্গেরি একটি সেনজেনভুক্ত দেশ, তাই শিক্ষার্থীরা হাঙ্গেরির ভিসা প্রাপ্তির মাধ্যমে সে সহজে ইউরোপের ২৬টি দেশে যাতায়াত করতে পারে। হাঙ্গেরি বিশ্ববিদ্যালয় যখন ছুটি থাকে, একটি স্টুডেন্ট তখন অন্যান্য দেশে গিয়ে কাজ করার মাধ্যমে বাড়তি আয় করার সুযোগ পায়।

স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে ফারজানা করিম বলেন, হাঙ্গেরি পড়াশোনা অন্যতম দিক হলো খুব সহজে স্থায়ীভাবে বসবাস এর নিশ্চয়তা। এছাড়া বাংলাদেশী অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা হাঙ্গেরিতে এসে ফ্রান্স, ইতালি, পর্তুগালে খুব সহজে গিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহজেই বসবাস করার সুযোগ পায়।

পরিবার নিয়ে বসবাস এর সুযোগ থাকার দরুন দক্ষিণ এশিয়ার স্টুডেন্টদের কাছে, ইউরোপের এই ছোট দেশটি হয়ে উঠেছে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার। বিগত বছর থেকে হাঙ্গেরি ভিসা প্রদানের বিষয়ে নমনীয়তা দেখিয়ে আসছে। ২০১৯ সালে হাঙ্গেরি দূতাবাস শতকরা ৯০% ভিসা প্রদান করে। সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণ শিক্ষার্থী হাঙ্গেরিতে পড়াশোনা করছে এবং এই ব্যাপারে হাঙ্গেরিতে বসবাসরত বাঙ্গালী, ব্যবসায়ী মো. সাদিকুর রহমান এরসাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, হাঙ্গেরিতে বাঙ্গালী কমিউনিউটি অনেক সমৃদ্ধ এবং সুনামের সাথে বসবাস করছে। তিনি আরও বলেন, বিগত বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিক্ষার্থী হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছে যা গর্ব করার মতো।

হাঙ্গেরিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বছরে ২ বা ৩ বার ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। এগুলো হলো এপ্রিল থেকে জুলাই, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে তাদের নিজস্ব আবেদনের জন্য অনলাইন পোর্টাল, তাই নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইন পোর্টালে আবেদন করতে হবে। এ বিষয়ে এ জন্য জরুরী বিষয় হলো শুরুতে স্টুডেন্ট ভিসার ধরন ঠিক করা এবং ভিসার আবেদন ফরম ডাউনলোড করে সেটা পূরণ করে অনলাইনেই আবেদন করা। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসগুলো আগে থেকে গুছিয়ে রাখা প্রয়োজন।
ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে ফারজানা করিম বলেন, বাংলাদেশে হাঙ্গেরিয়ান এমব্যাসি না থাকায় ভিসার আবেদনের জন্য আপনাকে ভারতের নয়াদিল্লিস্থ হাঙ্গেরিয়ান এমব্যাসিতে যেতে হবে। ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২ মাস থেকে ৩ মাস পর্যন্ত লাগতে পারে।
 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পাওয়া প্রসঙ্গে ফারজানা করিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে টুরিষ্ট ভিসা পাওয়ার ক্ষেতে আগে ১২-১৫টি রাষ্ট্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেখাতে হতো, কিন্তু করোনা মহামারির কারনে পর্যটন শিল্পে ধস নামার পর এখন ৫-৭টি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেখালেই হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্টে ভ্রমণ ভিসার ক্ষেত্রেও ভ্রমণকারীর মাঝে নেতিবাচক কোন সন্দেহ পরিলক্ষিত হলে তার ভিসা প্রদান করা হয় না। আর স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে চুক্তিকৃত বিশ^বিদ্যালয় গুলোতে আমরা বিশ^বিদ্যালয়ের দেয়া নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থী প্রেরণ করে থাকি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো আমরা যারা বিশ^বিদ্যালয় গুলোর প্রতিনিধিত্ব করে থাকি তাদের শিক্ষার্থী সরবরাহ করে। তিনি বলেন, এছাড়াও আস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউকে, জার্মানিসহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষার্থী সরবরাহ করে থাকি।