বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
এগ্রো ট্যুরিজমের ব্যতিক্রমি উদ্ভাবক কামরুল বাশার 
এগ্রো ট্যুরিজমের ব্যতিক্রমি উদ্ভাবক কামরুল বাশার 

এগ্রো ট্যুরিজমের ব্যতিক্রমি উদ্ভাবক কামরুল বাশার 

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : April 28, 2022 | গণযোগাযোগ ও গণতন্ত্র

শেখ কামরুল বাশার একজন তরুণ ও পরিশ্রমি উদ্যাক্তা। তিনি মিরাকী এগ্রো লিমিটেড, জয়রামপুর ট্যুরিজম ভিলেজ ও  এনইউ গ্লোবাল লিমিটেড নামক একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়াও তিনি পর্যটন, হসপিটালিটি, নিরাপদ খাদ্যসহ বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। পর্যটন শিল্পে পল্লীগ্রাম কেন্দ্রীক ব্যতিক্রমি উদ্যোগ কৃষি ভিত্তিক পর্যটন নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন বিভোর হয়ে। কৃষি ও প্রকৃতির সংস্পশে পর্যটন স্থাপন করে স্বল্প বিনিয়োগ বা সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ছাড়াই শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে  পর্যটন শিল্পে রাজস্ব আয়ের ধারনা তিনিই সর্বপ্রথম প্রতিফলিত করেন। যার প্রেক্ষিতে গ্রামের কৃষি নির্ভরশীল মানুষরাও পর্যটন শিল্পের মুনাফা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়াও গ্রামের উৎপাদিত ফল ফসলকে কোন হাতবদল ছাড়াই সরাসরি উৎপাদক ও ভোক্তাকে সংযুক্ত  করে তিনি কৃষককে যেমন  সংযুক্ত করেছেন প্রত্যাশিত মুনাফার সঙ্গে তেমনই ভোক্তাদেরও স্বল্পমূল্যে নির্ভেজাল কৃষিপণ্যের নির্যাষ দিতে সক্ষম হয়েছেন। 

কামরুল বাশার বলেন, চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের পর্যটন তথা সার্বিক আর্থ-সামাজিক কাঠামো যেভাবে পাল্টে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, তাতে করে অবিলম্বে পর্যটন গ্রাম স্থাপন করে কৃষি উৎপাদন, সংরক্ষণ, বন্টন, ঔষধি উদ্ভিদের উৎপাদন, দেশজ চিকিৎসাকে পুনঃস্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে পর্যটনকে নতুন রূপ দেওয়া এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশে প্রায় ৮৭ হাজার গ্রাম আছে। সরকার পরিকল্পনা নিলে এর মধ্য থেকে প্রতিটি জেলার একটি করে গ্রামকে মাত্র ২ বছরের মধ্যে সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে পর্যটন গ্রামে রূপান্তর করা যায়। সরকার বা বেসরকারি উদ্যোক্তা গ্রামের মানুষদেরকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। দেশের চিন্তাশীল পর্যটন বোদ্ধাগণের এই ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহন করে অল্প সময়ের সিদ্ধান্তে প্রস্তুতি গ্রহন করা হয় যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার অন্তর্গত ‘জয়রামপুর’ নামক গ্রামকে দেশের প্রথম পর্যটন গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২০২০ সালের নভেম্বরেই তরুন উদ্যক্তা শেখ কামরুল বাশারের আন্তরিক চেষ্টা ও গ্রামবাসীর সহযোগিতা আর ইধহমষধফবংয ঞড়ঁৎরংস ঊীঢ়ষড়ৎবৎ'ং অংংড়পরধঃরড়হ –ইঞঊঅ  এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশের প্রথম পর্যটন গ্রাম ‘জয়রামপুর এগ্রো ট্যুরিজম ভিলেজ’ এর যাত্রা শুরু করে। 
পর্যটন গ্রামের যাত্রা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কামরুল বাশার বলেন, “গ্রামীণ পর্যটন মেলা ও পল্লী সাংস্কৃতিক উৎসব” আয়োজনের  মধ্য দিয়ে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলাধীন জয়রামপুর গ্রামকে দেশের প্রথম এগ্রোট্যুরিজম ভিলেজ সূচনা পর্বের উদ্বোধন করা হয় ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর। গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে ‘মিরাকি এগ্রো লিমিটেড’ ও ঘট ঞৎরঢ় খরহশ নামক দুইটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ‘জয়রামপুর কৃষি পর্যটন গ্রাম’ স্থাপনের কাজ শুরু করে। বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যটন নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরারস এসোসিয়েশন বিটিইএ এর চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর এই চলমান কাজের অগ্রগতি দেশের সরকারি বেসরকারি পর্যটনবিদদের নিকট তুলে ধরেন এবং তাদের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেন। এভাবেই যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর অডিটোরিয়ামের মঞ্চে জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে দেশের প্রথম এগ্রো ট্যুরিজম ভিলেজ বা পর্যটন গ্রামের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা উপস্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন এর সভাপতি মোখলেছুর রহমানের উদ্বোধনের মাধ্যমে এ পর্যটন গ্রামের যাত্রা শুরু হয়। যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল এই কাজের সার্বিক সহযোগিতা ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার আশ্বাস প্রদান করেন। এটি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং এই ধারাবাহিকতায় দেশের ৬৪ জেলাতে আগামী ৩ বছরের মধ্যেই একটি করে ‘মডেল পর্যটন গ্রাম’ স্থাপিত হবে বলে সেখানে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 
এরপর কাছের বা দূরের পর্যটক গনের আগমনে সময় সময় মুখরিত হতে থাকে গ্রামটি। করোনা মহামারির  কারনে চলাফেরায় নিষেধ থাকার কারনে ডিসেম্বরের পর কয়েক মাস থমকে যায় সব কিছু। এখানে নামমাত্র বিনিময়ের মাধ্যমে আম, লিচুর বাগানে পেট পুরে ফল খাওয়ার মজাই আলাদা। সেটিও আবার ইচ্ছে মত গাছে চড়ে, নিচ থেকে নাগাল পেয়ে ছিড়ে, দেশি আমের গাছে ঢিল ছুড়ে আম লিচু আর আমরা ভেঙে যারা খেয়েছে তারা খাওয়ার চেয়েও বেশী মুগ্ধ হয়েছে এমন সুখময় অভিজ্ঞতার স্বাদ পেয়ে। যেন ফিরে গেছে দুরন্ত কৈশোরের দিনগুলোতে মামার বাড়ী বা দাদীর বাড়ির নস্টালজিক স্মৃতি খুজে ফিরছিলেন কেউ। এখানকার ফলাহারের সঙ্গে ছিটা রুটি দেশি মুরগীর মাংস এই অতিথিগণের আফসোস আরও বাড়িয়ে দেয় গ্রামবাসীর সরল আতিথিয়তায়। ১০ থেকে ১২ পদের দেশি ফলের ঝুড়ি সাজিয়ে যখন আপন ঠিকানার উদ্দশ্যে পর্যটকরা ফিরে যায় তখন নিজের আপনজনের গ্রামের বাড়ি হতে ফেরার অনুভূতিই নাড়া দেয়।  
পর্যটন গ্রামের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ কামরুল বাশার বলেন, আধুনিক পর্যটনের অর্থ হলো পর্যটনকে সাশ্রয়ী ও জীবনমুখী করা। পর্যটনের উপাদানসমূহের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে জীবনের উৎকর্ষ সাধন করে মানুষের বিশ্রাম, বিনোদন ও শিক্ষার জায়গাকে নিশ্চিত করা যায়। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হলে আমাদেরকে কৃত্রিম পর্যটন সেবা থেকে সরিয়ে এনে প্রাকৃতিক পর্যটন সেবার দিকে ধাবিত করতে হবে। পর্যটন গ্রামের প্রয়োজনীয়তা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন অনুভূত হচ্ছে এবং করোনা প্রভাবের জন্য অদূর ভবিষ্যতে আরো তীব্রতরভাবে অনুভূত হবে। প্রত্যেকেই নিজেদের সম্পদ ও সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে নানা আঙ্গিকে পর্যটন গ্রাম গড়ে তুলছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নিচের কারণগুলির জন্য পর্যটন গ্রাম গড়ে তোলা দরকারি-
১.  পর্যটন গ্রাম হবে পরিচ্ছন্ন ও অধিকতর স্বাস্থ্যসম্মত, যা বসবাসের জন্য অধিক উপযোগী।
২.  কৃষকদেরকে সংগঠিত করে গ্রামে জৈবকৃষির সূচনা হবে, যা গণস্বাস্থ্যের নতুন ভিত্তি রচনা করবে।
৩.  মানুষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ও কটেজ আকারের পণ্য ও শিল্প উৎপাদনে এগিয়ে আসবে।
৪. স্বল্পশিক্ষিত মানুষকে প্রায়োগিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদনশীল মানুষে পরিণত করা যাবে।