বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
দেশেই এখন অত্যাধুনিক অলংকার তৈরির আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে
এম এ হান্নান আজাদ, সহ সভাপতি, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি

দেশেই এখন অত্যাধুনিক অলংকার তৈরির আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : April 28, 2022 | অর্থনীতি

এম এ হান্নান আজাদ

ম্যানেজিং ডিরেক্টর, অলংকার নিকেতন (প্রাঃ) লিঃ
সহ সভাপতি, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি

এম এ হান্নান আজাদ অলংকার নিকেতন (প্রাঃ) লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। বাংলাদেশের আধুনিক জুয়েলারি শিল্পের আজকের অবস্থানের পেছনে তার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এম এ হান্নান আজাদ বর্তমানে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সহ-সভাপতি। তিনি একাধারে দেশের বৃহত্তর শপিংমল বসুন্ধরা দোকান মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট। বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। এম এ হান্নান আজাদ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর একজন সদস্য। জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে নিবেদিত প্রান হান্নান আজাদ জুয়েলারি শিল্পের প্রতিটি আন্দোলনে সম্মুখ সারির নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হান্নান আজাদ শুধু একজন ব্যবসায়ী নেতা নন তিনি একজন সমাজ সেবায়ও তার অবদান উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি বাংলাদেশে জুয়েলারি ব্যবসা ও শিল্পের অগ্রগতি নিয়ে হান্নান আজাদ কথা বলেন প্রতিষিদ্ধের সঙ্গে। 
স্বর্ণ নীতিমালার ব্যপারে হান্নন আজাদ বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদেরকে একটি সময়োপযোগী স্বর্ণ নীতিমালা উপহার দিয়েছেন। এই নীতিমালার মাধ্যমেই সমৃদ্ধ হবে দেশের স্বর্ণ শিল্প। অতীতে স্বর্ণশিল্পে সমৃদ্ধ ছিল বাঙালি জাতি। কিন্তু একটি আধুনিক নীতিমালা না থাকায় শিল্পটি ক্রমান্বয়ে তার গৌরব হারাতে বসে। হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেও কালোবাজারি বলা হতো। ব্যাংকও ঋণ দিতে চায় না। এখন নীতিমালা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে আমরা মর্যাদার সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবো বলে আশা করছি। তবে এ নীতিমালার বাস্তবায়ন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
 
তিনি বলেন, বাজুসের বর্তমান সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর একটি গোল্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে একটি শক্তিশালী কমিটিও গঠন করা হয়েছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা সেই ব্যাংক থেকে ঋণ পাবেন। অর্থের কারণে কোনো ব্যবসায়ীকে সমস্যায় পড়তে হবে না। অর্থ সংকট না থাকলে জুয়েলারি শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নীতিমালা দিয়েছেন, বর্তমান সভাপতি আমাদেরকে দক্ষ নেতৃত্ব এবং আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি জাপানের জুয়েলারি মেলায় অংশগ্রহণ করেছি সেখানে ২ লাখ ডলারের জুয়েলারি বিক্রি করেছিলাম। আমাদের দেশের স্বর্ণ শিল্প এত সম্ভাবনাময় যে, যদি সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পাই তাহলে পোষাক শিল্পের মতোই জুয়েলারি শিল্পের অবস্থান হবে। আমাদের জুয়েলারি শিল্পীরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তবে আমাদের জুয়েলারি শিল্পের উপর আরও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট করা প্রয়োজন। এতে করে দক্ষ লোক তৈরি হলে দেশের জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে বলে আমি আশাবাদী।
সম্প্রতি বাংলাদেশ জুয়েলারি এক্সপো ২০২২ তিনদিন ব্যাপী দেশে প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানীর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়। শেষ দিনে সবচেয়ে বেশি জমে উঠেছিল এ এক্সপো। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গন। জুয়েলারি এক্সপো-২০২২ উদ্বোধন করেন দেশের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। মিলন বলেন- আজকে ঐতিহাসিক দিন। আমি মনে করিগার্মেন্টসের মতোই দেশের স্বর্ণ শিল্পও বিশ্ব বাজারে জায়গা দখল করে নেওয়ার লক্ষেই কাজ করছে বাজুস। তিনি আরও বলেন- সোনা এতই মুল্যবান যে কোন ভাল কিছুকে সোনার সঙ্গে তুলনা করা হয়। বাংলাদেশ গার্মেন্টেসের পরই সোনা দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানি শিল্প হিসাবে হবে বলে বিশ্বাস করি। সায়েম সোবহান আনভীর এই স্বর্ণ শিল্পের যাত্রাকে সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গায় নিয়ে যাবেন।
 মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন জুয়েলারি শপগুলো তাদের পণ্যে নানা ধরনের ছাড় দিয়েছে। এক্সপোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মূল্য ছাড়সহ আকর্ষণীয় অফারের ছড়াছড়িতে প্রথম দিন থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল নামে। মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তৈরি করা নানা ডিজাইনের অলঙ্কার প্রদর্শন করছে। এখানে এসে নগদ টাকায় যেমন কেনাকাটা হয়েছে তেমনি কেউ চাইলে পছন্দের অলঙ্কার অর্ডার করেও রেখেছে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী অলঙ্কার ডিজাইন করারও সুযোগ ছিল এ মেলায়। 
সমাপনী অনুষ্ঠানে জমকালো ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য র‌্যাফেল ড্রতে নগদ ১০ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার, ৫ লাখ টাকার ২য় পুরস্কার এবং ৩য় পুরস্কার হিসেবে পরবর্তী ১০ জনের জন্য রয়েছে ১ লাখ টাকা করে ১০টি। মেলায় সাংবাদিকদের জন্য ছিল আলাদা র‌্যাফেল ড্র। এক্সপোতে মোট স্টল ছিল ৬৫টি। দেশ-বিদেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা এতে অংশ নিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে গড়া নিত্যনতুন ডিজাইনের অলংকার প্রদর্শন করা হয়েছে।
 
আমাদের দেশীয় স্বর্ণ শিল্প কতটুকু প্রযুক্তির ছোয়া পেয়েছে জানতে চাইলে হান্নান আজাদ বলেন আমাদের দেশের স্বর্ণ বিশ্বের স্বর্ণ বিলাসী মানুষের কাছে হাতের তৈরি নিখুঁত নকশার স্বর্ণালংকারের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এছাড়া দেশেই এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অলংকার তৈরীর আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অনেক দেশেই নেই। আমাদের আছে মান-নিয়ন্ত্রণের অত্যাধুনিক প্রতিষ্ঠান। যা সারা বিশে^ স্বীকৃত। এত কিছু থাকার পরও এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছি না শুধুমাত্র বৈশি^ক প্রতিযোগিতার সক্ষমতার অভাবে।
বিদেশে দেশি স্বর্ণলংকার রপ্তানি করা স্বপ্ন ছিল। আমিই নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ থেকে প্রথম স্বর্ণালংকার রপ্তানি করি। বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পটা আমার কাছে অকেনটা পোষাক শিল্পের মতো। আমি মনে করি শুধুমাত্র এয়ারপোর্টে যেটুকু স্বর্ণালংকার নিয়ে আমি বিদেশ যাচ্ছি সেটা ডিক্লারেশন দিয়ে বিদেশে সেটা বিক্রি করে সমপরিমান ওজনের সলিড গোল্ড নিয়ে আসতে পারি এরপর বাকিটা নগদ ডলারে যদি আনা যায় তাহলে দেশ লাভবান হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এই নিয়মে ব্যবসা করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। আমি বাংলাদেশ অর্নামেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ করেছি কিন্তু প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমোদনের অভাবে বিদেশে এক্সপোর্ট করতে পারছি না। বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পে ২৮ লক্ষ লোক কাজ করছে। 
হান্নান আজাদ জানান, অনেকে মনে করেন জুয়েলারি শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে, কিন্তু আমি মনে করি জুয়েলারি শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশি বিনিয়োগই জুয়েলারি খাতে পর্যাপ্ত।