বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
টিক্যাবের দাবি গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সময়োপযোগী 
টিক্যাবের দাবি গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সময়োপযোগী 

টিক্যাবের দাবি গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সময়োপযোগী 

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : June 30, 2022 | সমস্যা ও সম্ভাবনা

সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে সিম বিক্রিতে দেয়া নিষেধাজ্ঞাকে সময়োপযোগী ও সাহসী উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব)।  
টিক্যাব এর আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক বলেন, আমাদের অপারেটরগুলোর অবস্থা এ ব্যাপারে খুবই নাজুক। বিটিআরসি, আন্তর্জাতিক সংস্থা আইটিইউ ও বিভিন্ন সংস্থার সেবার মানদণ্ডের মাপকাঠিতে আমাদের দেশের অপারেটরগুলো এখনো পেছনের সারিতে। ইন্টারনেটের গতি মাপার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওকলার জুন ২০২১ সালের ‘স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স’ মতে, বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫ নম্বরে। বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে শুধুমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা ভেনেজুয়েলা। গত ১ এপ্রিল’২২ সর্বশেষ বেতার তরঙ্গ নিলামের পর গ্রামীণফোনের মোট একসেস তরঙ্গ দাঁড়িয়েছে ১০৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্জে, রবির ১০৪ মেগাহার্জে, বাংলালিংকের ৮০ মেগাহার্জে ও টেলিটকের ৫৫ দশমিক ২০ মেগাহার্জে। দেশে বর্তমানে মোবাইল গ্রাহক প্রায় ১৭ কোটি ৬৯ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক প্রায় ৮ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার, রবির গ্রাহক ছিল ৫ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার ও  টেলিটকের ৬০ লাখ ৯০ হাজার। গ্রাহকপ্রতি বেতার তরঙ্গের হিসেবে দেশের অপারেটরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রামীণফোনের। অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে আমাদের অপারেটরগুলো পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশসহ বেশির ভাগ দেশের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে আছে।

 ধীরগতির ইন্টারনেট, কলড্রপ, মিউট কল, ইন্টারনেট প্যাকেজের নামে প্রতারণাসহ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। বিটিআরসি জমা পড়া অভিযোগের প্রায় ৯০ শতাংশই সেবার মান নিয়ে। আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন আর নানা অফারের ফাঁদ পেতে কাক্সিক্ষত সেবা না দিয়েই গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। ভয়েস কল কিংবা ইন্টারনেট কোনটিতেই মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারছে না অপারেটরগুলো। নিজেদের অর্থে কেনা ইন্টারনেট প্যাকেজ দুর্বল নেটওয়ার্ক ও সময়সীমার কারণে পুরোটা ব্যবহার করতে পারছে না গ্রাহকরা। দীর্ঘদিন ধরে টিক্যাব অব্যবহৃত ইন্টারনেট ডাটা ফেরতের দাবি জানিয়ে আসলেও নানা অজুহাতে ডাটা ফেরত দিচ্ছে না অপারেটরগুলো। বাজে নেটওয়ার্কের কারণে কলড্রপের ও মিউট কলের শিকার হয়ে একই কলের জন্য একাধিকবার টাকা গুনতে হচ্ছে গ্রাহককে। ২০২০—২১ অর্থবছরে ১২ মাসে গ্রাহকের ৫২ কোটি ৫৯ লাখ মিনিট কল ড্রপ হয়েছে। অপারেটরগুলো ক্ষতিপূরণ দিয়েছে মাত্র ১১ কোটি ৪৫ লাখ মিনিট। যা গ্রাহকদের খরচ করা টক টাইমের মাত্র ২২ শতাংশ। এতে ৪০ কোটি ৯৩ লাখ মিনিট কল ড্রপের বিপরীতে গ্রাহকদের প্রায় ১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। যেখানে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে সেখানে অপারেটররা প্রতি ৩ থেকে ৭ মিনিটের বিপরীতে ১ মিনিট করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে অবস্থা আরো শোচনীয়। কোন যানবাহনে উঠলে ও রুমের ভিতরে ঢুকলেই ফোর—জি ইন্টারনেট সেবা পরিণত হয়ে যাচ্ছে টু—জিতে।
টিক্যাব আহ্বায়ক বলেন,  এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মান সন্তোষজনক নয়, তাই তারা নিচ্ছে না। এ অবস্থায় আদতে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ গ্রাহকরা। বর্তমানে গ্রামীণফোন মাত্র ১২ ভাগ, রবি ১৮ ভাগ, বাংলালিংক ৩১ ভাগ, টেলিটক ৬৪ ভাগ অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করছে। বছরের পর বছর ধরে নিম্নমানের সেবা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিলেও সেবার মান উন্নয়নে নজর নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর। 
মুর্শিদুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা অভিযোগ জানিয়ে আসলেও এতদিন তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করে গ্রাহক স্বার্থরক্ষায় সবগুলো অপারেটরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।