শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
১১৬ বছর পূর্ণ  করলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানবকল্যাণে নিবেদিত ‘হামদর্দ’
১১৬ বছর পূর্ণ  করলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানবকল্যাণে নিবেদিত ‘হামদর্দ’

১১৬ বছর পূর্ণ  করলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানবকল্যাণে নিবেদিত ‘হামদর্দ’

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : August 01, 2022 | বাংলাদেশ

হামদর্দ  বর্তমানে বাংলাদেশের সেবা খাতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও প্রকৃতির সঙ্গে শারীরিক সুরক্ষা সমন্বয় রক্ষা করে ১১৬ বছর পূর্ণ  করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সঙ্গে সঙ্গে অর্জন করেছে দেশের আপামর জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা। ১৯০৬ সালে ভারতের প্রখ্যাত ইউনানী চিকিৎসাবিজ্ঞানী হাফেজ হাকীম আবদুল মজিদ দিল্লীতে হামদর্দের যাত্রা শুরু করেন । উপমহাদেশের মানুষের রোগমুক্তিতে স্বদেশীয় ভেষজ চিকিৎসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন তিনিই । হামদর্দ পরিবার প্রতিষ্ঠার্ষিকীর এই শুভক্ষণে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে পরম শ্রদ্ধেয় হাফেজ হাকীম আবদুল মজিদ, তার সম্মানিত স্ত্রী রাবেয়া মজিদ, দুই সন্তান প্রখ্যাত ইউনানী চিকিৎসাবিজ্ঞানী হাকীম আবদুল হামিদ এবং শহীদ হাকীম মোহাম্মদ সাঈদকে। 
পহেলা আগস্ট এই উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হামদর্দ এর ১১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১১৬ বছর পেরিয়ে কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসায় ধন্য প্রতিষ্ঠানটি পা রাখলো ১১৭ তে। 
হামদর্দ বাংলাদেশের চিফ মোতাওয়াল্লী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা মাত্র ৫০ হাজার টাকার পুঁজি এবং প্রায় ছয় গুণ দায় দেনা নিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হামদর্দ বাংলাদেশকে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলাম। সেই সময় হামদর্দের কাজ করার জন্য বাহন ছিল মাত্র একটি সাইকেল। এই কন্টকাকীর্ণ অভিযাত্রায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা রেখে বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় সবসময় আমরা ন্যায়ের পথে, মানবতার পক্ষে প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। সময়ের পালাক্রমে হামদর্দ আজ পরিণত হয়েছে মহীরুহে। স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি হামদর্দ গড়ে তুলেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু প্রতিষ্ঠান।
মানবকল্যাণে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করায় শিল্পাচার্য পদক ৯৫, স্বাধীনতা পদক ৯৭, জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা পদক ১০৯৭, ইরাক সরকার কর্তৃক বেস্ট হারবাল এ্যাওয়ার্ড ৯৯, রোকেয়া পদক ২০০০, সাংবাদিক সানাউল্লাহ নূরী পদক ২০০২ অর্জন করেন ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া এবং হামদর্দ পরিবার। ১৯৯৪ সাল। ঢাকার অদূরে ছায়াসুনিবিড় সোনারগাঁওয়ে আধুনিক কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন হামদর্দের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বপ্নপুরুষ মরহুম হাফেজ আবদুল মজিদের সুযোগ কনিষ্ট পুত্র শহীদ হাকীম মো. সাঈদ। এরপর বিপুল কর্মদ্যোগে ওষুধ উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে হামদর্দ। ১৯৯৭ সালে নোয়াখালীতে এইচ এ জনকল্যাণ আলিম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ১৯৯৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফান্ডে অনুদান প্রদান করে হামদর্দ। 
২০০৪ সালে ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া’র একক প্রচেষ্টায় ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও হার্বাল ওষুধ শিল্প থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে সরকার। এই খাতের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভ্যাট না থাকায় এই শিল্প খাত ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে। প্রতিষ্ঠিত হয় নতুন অনেক শিল্প কারখানা। বাড়ে কর্মসংস্থান এবং ওষুধের বাজার। এখন সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল খাতে বিনিয়োগ করে সফল হচ্ছে কেবল ভ্যাট না থাকার কারণে। 
হাকীম মো. সাঈদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০০৮ সালে শিক্ষা বিস্তারে অসাধারণ উদ্যোগ গ্রহণ করেন ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া। হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের জন্য জমি ক্রয় করেন এবং মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন হাকীম মো. সাঈদের সুযোগ্য কন্যা সাদিয়া রশিদ।  শহীদ হাকীম মো. সাঈদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একই বছর নামে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় হাকীম সাঈদ ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ।
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া মনে করেন, সমাজকে বদলে দেবার জন্য শুধু শিক্ষিত নয় পাশাপাশি সৎ মানুষও খুব জরুরি। এই অসাধারণ লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ সালে তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় হামদর্দ পাবলিক কলেজ। যা এখন স্বনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। প্রতিবছর সফলতার সঙ্গে শতভাগ উত্তীর্ণ হয় এই কলেজের শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে অসংখ্য শিক্ষার্থী কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে বুয়েট, মেডিকেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে কর্মজীবনে দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। 
২০১২ সালে ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া প্রতিষ্ঠা করেন হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের হাত থেকে সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া। একই সালে হামদর্দ প্রধান কার্যালয়ে উদ্বোধন করা হয় বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন। যে কর্নারে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দুর্লভ গ্রন্থের সমাহার। ২০২০ সালে কতিপয় দুর্বৃত্তের দুদকে দায়ের করা অভিযোগ থেকে খালাস পান ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া এবং দুদক তাকে ক্লিন সার্টিফিকেট প্রদান করে। ২০২১ সালে এ্যালোপ্যাথিক, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক এই তিন পদ্ধতির সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় হামদর্দ জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এম.পি।
মানবকল্যাণে আরো ভূমিকা রাখতে হামদর্দের বিপণন কার্যক্রমের গতি বাড়াতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ বছর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আধুনিক কারখানায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় বড় পরিসরে আয়ুর্বেদিক ডিভিশনের আধুনিক কারখানার। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় লক্ষ্মীপুরে রওশন জাহান ইউনানী মেডিকেল কলেজ চত্বরে সমন্বিত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার। ভারতের স্বাস্থ্য বিষয়ক আয়ুশ মন্ত্রণালয় হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে ইউনানী চেয়ার হিসেবে পাঠান প্রখ্যাত ইউনানী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনোয়ার হোসেন কাজমীকে। ক্যাম্পাসে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উদ্যাপন করা হয় ইয়োগা ডে। এ বছরই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা পান ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া।
এভাবে বর্ণাঢ্য কর্মতৎপরতা এবং মানুষের কল্যাণে নির্ঘুম কাজ করতে বাতিঘর ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া’র নেতৃত্বে ছুটে চলছে হামদর্দ বাংলাদেশ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও মানবকল্যাণে সাধারণ মানুষের জন্য সুদিন আনতে অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে হামদর্দ বাংলাদেশ।