বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
জরায়ুর মুখে ক্যান্সার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন এর ভূমিকা
ডা. হাসনা হোসেন আখি  

জরায়ুর মুখে ক্যান্সার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন এর ভূমিকা

ডা. হাসনা হোসেন আখি  
প্রকাশের সময় : August 02, 2022 | স্বাস্থ্য

আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। বাংলাদেশ তার নিজস্ব ভ্যাকসিন  প্লান্টে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ভ্যাকসিন উৎপন্ন শুরু করেছে।নাম দিয়েছে  পেপিলোভ্যাক্স। 
 আমরা সবাই জানি বাংলাদেশ ক্যান্সার মৃত্যুর হারে জরায়ুমুখের ক্যানসার রয়েছে দ্বিতীয়। জরায়ুমুখের ক্যানসার কে বলা হয় নীরব ঘাত। কারণ আক্রান্ত হলে অনেক সময় লক্ষণ বোঝা যায় না। গবেষণা অনুযায়ী ভাইরাস প্রবেশের পর ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগে জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৫ লাখ ৭০ হাজার নারী এই জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং প্রায় তিন লাখ ১০ হাজার নারী মারা যান। 

জরায়ুর মুখে ক্যান্সার নারীদের জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধি। সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের নারীরা স্বাস্থ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন না বলে এই রোগের বিস্তার বেশি। সার্ভিক্স হচ্ছে জরায়ুর নিচের সরু অংশটা যা ভ্যাজাইনা ও জরায়ুর উপরের অংশ কানেক্ট করে। যখন ক্যান্সার শুরু হয় সার্ভিস সেবা জরায়ুর মুখে একে সার্ভাইক্যাল বা জরায়ুমুখ ক্যান্সার বলা হয়। 

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রধান কারণ। যৌন সঙ্গমে   এ-র সংক্রমণ ঘটে । সংক্রমণের এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জরায়ুমুখের স্বাভাবিক কোষ পরিবর্তিত  হতে থাকে এবং একসময় তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। ২০ বছরের নিচে এ রোগ সাধারণত হয় না। আক্রান্তরা সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী হয়ে থাকেন। ৬০ বছর পরেও এ রোগ হতে পারে তবে সংখ্যা তুলনামূলক কম। 
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস একটি সাধারন ভাইরাস যা অধিকাংশ নারীই তাদের জীবনের কোন না কোন সময় সংক্রমিত হয়। একশ টির বেশি ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস রয়েছে যার বেশিরভাগই জরায়ু ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। জরায়ুমুখ ক্যানসার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ১৬ এবং ১৮ সংক্রমণের কারণে হয়। 

এর মধ্যে যেসব নারীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তারা হচ্ছেন যারা বাল্য বিয়ে করেছেন, একাধিক বিয়ে করেছেন, অল্প বয়সে মা হয়েছেন ঘনঘন সন্তান ধারণ করেছেন, স্বামী একাধিক বিয়ে করেছে অথবা যৌন সাথী আছে, অপুষ্টি ইনফেকশন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া,একটানা ১০ থেকে ২০ বছর জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করা ,ধূমপান পান জর্দা সাদাপাতা অভ্যস্ত যারা। 
কিন্তু  জরায়ুমুখের ক্যানসার কিন্তু পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য। দরকার দুইটি জিনিস, একটি হচ্ছে ভ্যাকসিন অন্যটি হচ্ছে স্ক্রীনিং। এতদিন আমাদের ভ্যাকসিন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। কিন্তু বাংলাদেশি ফার্মেসিউটিক্যালস ইনসেপ্টা তাদের নিজস্ব প্লান্টে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জরায়ুমুখের ভ্যাকসিন উৎপন্ন শুরু করেছে। এটি একটি  রিকম্বিনেন্ট ভ ভ্যাকসিন এবং বাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন।হিউমান পেপিলোমা ভাইরাস ১৬ এবং ১৮ বিরুদ্ধে এটি কাজ করে । একটি প্রেফিলড সিরিঞ্জে  এটি বাজারে বাজারজাত করা হচ্ছে। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। 

ভ্যাকসিনের টার্গেট গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী বালিকাদের।এদের জন্য দুটি ডোজ  দিলেই যথেষ্ট। প্রথমটি দেওয়ার ছয় মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। ১৫ থেকে ২৬ বছর বয়সী মহিলারাও দিতে পারবে। তাদের জন্য প্রয়োজন হবে তিনটি  ডোজ।  ০,১,৬ মাসে তারা তিনটি ডোজ সম্পন্ন করবে। অবিবাহিত মেয়েদের ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে কোনো রকম স্ক্রিনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু  বিবাহিত  মেয়েরা ভ্যাকসিন দেওয়ার আগেই  স্ক্রীনিং  করে নিলে ভালো। এখন পর্যন্ত বুস্টার ডোজ এর কোন প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়নি। ২৬ থেকে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েরাও দিতে পারবে, যদি সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে।
যেহেতু এটি একটি  বাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন শুধু দুটি স্ট্রেইন    এর বিরুদ্ধে  প্রতিরক্ষা দিবে। বাকি  ভেরিয়েন্ট   দিয়ে কিন্তু আবার  ক্যান্সার হতে পারে।
তবে বাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন হিসেবে এর  কার্যকারিতা শতভাগ। খুব শীগ্রই হত গভমেন্ট ইপিআই সিডিউল এ এটি বিনামূল্যে বাংলাদেশের বালিকাদের মধ্যে দেওয়া হবে । 
বাংলাদেশ ওজিএসবি জরায়ুমুখ ক্যানসার বিহীন একটি জাতি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। আসুন আমরা সবাই মিলে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন কে জনপ্রিয় করে তুলি।
ডা. হাসনা হোসেন আখি  
কনসালটেন্ট (গাইনি )
বিআইএইচএস জেনারেল হসপিটাল (বারডেমের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান)
মিরপুর ১, দারুস সালাম, ঢাকা।