শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
সিন্ডিকেটের স্বর্ণ যুগে বাংলাদেশ নিষ্পেষিত জনজীবন
মোঃসুমন ইসলাম ফারাবী, শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সিন্ডিকেটের স্বর্ণ যুগে বাংলাদেশ নিষ্পেষিত জনজীবন

মোঃসুমন ইসলাম ফারাবী
প্রকাশের সময় : August 16, 2022 | গণমানুষের কথা

বাংলাদেশে জনগণের নাভিশ্বাস হওয়া বিষয়গুলোর প্রধান কারণ "সিন্ডিকেট " নিয়ে আলোচনা করা এখন সময়ের দাবি ।দেশের ক্রান্তিলগ্নে জনজীবন আজ কিংকর্তব্যবিমূঢ়।একদিকে খাদ্য দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে জ্বালানি দ্রব্যের মূল্য আকাশ-পাতাল ব্যবধান। কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পূর্ব সতর্কতা, যেন জনজীবনের আয়ের পথগুলো সংকীর্ণ গণ্ডিতে  আবদ্ধ হওয়ার  উপক্রম,বেকারত্বের কালো থাবায় নিষ্পেষিত ছাত্র জীবন,পরিবহন খরচের ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতা । সামাজিক অবক্ষয়ের স্বর্ণ শিহরে পদার্পণ,বিদ্যালয় কলেজে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের  হাতে ফ্রি ফায়ার,পাবজি,লাইকি,টিকটিক ইত্যাদি বিষয়গুলো যেন আজ হরহামেশাই ধ্বংস করছে তাদের ছাত্র জীবন।দেশের রিজার্ভ দিনকে দিন নিম্নমুখী পতন,অর্থপাচার, খাদ্যে ভেজাল যেন নিত্যদিনের পলাশীর আম্রকানন । সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়টি যদি সিন্ডিকেটের বাহিরের বিষয় বিবেচনা করা   হয় তাহলে অন্যান্য বিষয়গুলো আজ যেন অদৃশ্য "সিন্ডিকেটের" দখলে।

এবার আসুন ভিন্ন আঙ্গিকে সিন্ডিকেটের রাজ্যে। বাংলাদেশের মতো ১,৪৭, ৫৭০বর্গ কিলোমিটার একটি আয়তন বিশিষ্ট রাষ্ট্রে আজ  টপ টু বোটম যেন সিন্ডিকেটের আতুড়ঘর। অর্থ পাচার সিন্ডিকেট,  তেল সিন্ডিকেট, পানি সিন্ডিকেট, বাজার সিন্ডিকেট,পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির সিন্ডিকেট, প্রশ্ন ফাঁস সিন্ডিকেট, দুর্নীতি সিন্ডিকেট, ক্যাসিনো সিন্ডিকেট সর্বোপরি এক যেন  সিন্ডিকেটের রাজ্য। কিভাবে সৃষ্টি হলো এই সিন্ডিকেট সিস্টেম বাংলাদেশে তা একট খতিয়ে দেখা উচিত।১৯৭১সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক- হানাদার বাহিনী থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্ত রাষ্ট্রে এই সিন্ডিকেট সিস্টেম  একদিনে তৈরি হয় নি।সময় সুযোগে এই সিন্ডিকেট শ্রেণী কখনো আধিপত্য বিস্তার প্রকট করেছিল কখনো শাসকশ্রেণীর  চাপে গর্তে প্রবেশ করেছিল।কি কারণ আছে এই সিন্ডিকেট শ্রেণী সৃষ্টির পেছনে তা আজ জাতির ক্রান্তিলগ্নে ফিরে দেখা উচিত।

"রাজনৈতিক সংস্কৃতি"ধারণাটি একটু পরিস্কার করে আলোচনা করলে এটি বোধগম্য হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে জন সম্মুখে।একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সেই রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া, চিন্তা-ভাবনা, মনোভব যে রাষ্ট্রের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে পরিগণিত হয় তখন সে দেশের মধ্যে বিরাজ করে সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা/সংস্কৃতি, যাকে আমরা বলি রাজনৈতিক সংস্কৃতি । কিন্তু, একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি দেশ জাতির বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রতিফলিত করে তাহলে সেখানে বা সেই রাষ্ট্রে জন বিরোধী "সিন্ডিকেট " সৃষ্টি হওয়া যেন একটি নতুন সংস্কৃতিতে পরিণত হওয়ার মতো ।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে  রাজনৈতিক সংস্কৃতি  তলানীতে যার ধরুন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেই কোনো মিলবন্ধন, নেই কোনো সমন্বিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। যার কারণে যে  কোনো  শ্রেণির মানুষ "সিন্ডিকেট " গড়ে তোলার সুযোগ লাভ করে হরহামেশাই। আর যদি বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্র ছায়ায় তৈরি হয়"সিন্ডিকেট শ্রেণী" তখন তাদের লাগাম টেনে ধরার কোনো উপকরণই থাকে না ক্ষমতাসীন দলের হাতে।যার জন্য নিষ্পেষিত হন সাধারণ জীবন প্রণালীতে আবদ্ধ মানুষগুলো।ব্যবসায়ী থেকে আমলা শ্রেণী, রাজনীতিবিদ থেকে কর্মচারি শ্রেণী সবাই তখন সিন্ডিকেট সদস্যে পরিণত হয়।বিশ্বে যে রাষ্ট্রগুলো অর্থনীতি,সাংস্কৃতিক, সামাজিক অবক্ষয় রোধ করে উন্নতির চরম শিহরে উপনীত হয়েছে, সেই রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক সংস্কৃতি কতটা উন্নত তা আমরা অনুধাবন করতে পারি,রাজনৈতিক বিকাশ ধারা বিশ্লেষণের মাধ্যমে,নিশ্চিত ভাবেই সেই রাষ্ট্রগুলোতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সরলতম রুপ সুশাসন বিদ্যামান । তাই বলা যায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি ভিন্ন  ধ্বংসাত্মক কুৎসিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি  বিকাশই সিন্ডিকেট সিস্টেম তৈরির প্রধান কারণ।

বাংলাদেশের সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে সিন্ডিকেট শ্রেণীর অসাধু ব্যবসা-সম্পৃক্ততার জন্য আজ দেশের জন সাধারণ যেন উভয় সংকটে।সিন্ডিকেটের সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার প্রচেষ্টা হাতে নেওয়া এখন সময়ের দাবি।রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সদ্ভাব গড়ে তুলতে হবে, দেশ ও জাতির সাধারণ মানুষের চিন্তা মাথায় রেখে সিন্ডিকেট বাজারকে বালির বাধেঁর মতো ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।নিজের জায়গা থেকে সবাইকে এর জন্য কাজ করতে হবে।সরকারকে এই ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতে হবে।দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার যেমন "জিরো টলারেন্স" ঘোষণা করেছেন অসাধু সিন্ডিকেট দমন করার জন্য নতুন "জিরো টলারেন্স " ঘোষণা করতে হবে।চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের প্রবেশপথকে সুগম করতে হবে।তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের পথ পেরিয়ে বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সিন্ডিকেট সিস্টেম থেকে বের হতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যা জাতির জন্য, জাতির জনসাধারণের জন্য এক অশনিসংকেত। সরকারি দল এবং "ছায়া সরকার" খ্যাত বিরোধী দল মিলে সিন্ডিকেট সিস্টেমের বিরুদ্ধে "No way" রুল'স জারি করতে হবে। খাটের নিচে ভোজ্যতেলের খনি পাওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে, বন্ধ করতে হবে কালো ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় বসবাসকারী সিন্ডিকেটের  রমরমা ব্যবসায়ের কার্যক্রম।ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম করতে হবে গতিশীল,গতিশীল হতে হবে দেশের বিচার ব্যবস্থা।সিন্ডিকেট সিস্টেমকে রুখে দিয়ে জনজীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে স্বস্তির নিঃশ্বাস। স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে দেশের জনজীবনে, জীবন যাত্রার মানে।সুতরাং  "সিন্ডিকেট সিস্টেম" নিপাত যাক,দেশের  অর্থনীতি মুক্তি পাক।এই স্লোগান হোক সবার;জনজীবনে অর্থনীতিতে  গতি ফিরে আসুক  আবার।

মোঃসুমন ইসলাম ফারাবী শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।