মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
জনগণের সম্পদের নিরাপত্তা দেয়ার লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স 
তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স লিমিটেড 

জনগণের সম্পদের নিরাপত্তা দেয়ার লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স 

প্রকাশের সময় : September 30, 2022 | বীমা

তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বাংলাদেশের পাবনা জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাথে ১৯৮৯ সালে তার বীমা কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোং লিমিটেডের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এবং কোম্পানি সেক্রেটারি, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক, কোম্পানি সচিব, এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। পরে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোং লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি এবং সর্বশেষে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাধারণ বীমা সেক্টরে তার ৩২ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। বর্তমানে, তিনি জানুয়ারী ২০১৬ থেকে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তিনি দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন বীমা শীর্ষ সম্মেলন এবং সম্মেলনে যোগদান করেছেন। তিনি একজন স্বনামধন্য সমাজসেবক এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন অস্ট্রেলিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সম্প্রতি তিনি বীমা সেক্টরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিষিদ্ধ‘র সঙ্গে কথা বলেছেন। 


বীমা দিবস: 
তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বলেন আমি মনে করি, দিবসটা বীমা শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বীমা দিবসে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনরা এতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবেন। ১ মার্চ ৭৯টি বীমা কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের নিজস্ব উদ্যোগে শোভাযাত্রা বের করেন। অফিসগুলোয় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এছাড়া প্রচারণার অংশ হিসেবে ট্রাক সুসজ্জিত করে শহরে প্রদক্ষিণ করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে বীমা সম্পর্কে মানুষের যে আস্থার সংকট, সেটা অনেকাংশে দূর হবে বলে আমি আশাবাদী।
মহামারীর প্রভাব: 
তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বলেন, কোভিডের জন্য দীর্ঘ দিনের লকডাউন ছিল। লকডাউনের মধ্যে আমাদের যাতায়াত,মানি ট্রানজেকশন বন্ধ ছিল। এই বন্ধের মধ্যে আমাদের ইন্সুরেন্স শিল্প ব্যবসায়িক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। শুধু ইন্সুরেন্স শিল্প নয়, সব ক্ষেত্রেই ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমানে কয়েক মাস থেকে আমরা গতি ফিরে পেয়েছি। করোনাকালীন সময়ে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা দেশের জনগণকে সেবা প্রদান করেছি। এই সময় মানবিক দিক বিবেচনা করেই আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস সচল রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স পরিবার সবসময় একাগ্র ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ থাকার চেষ্টা করেছে।
বীমা শিল্পে অগ্রগতি:
এখন পর্যন্ত বীমা শিল্পে কী ধরণের অগ্রগতি হয়েছে জানতে চাইলে তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বলেন, বীমার অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি। তবে বর্তমান সরকারের যে বিভিন্ন উদ্যোগ, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও আইডিআরের (বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ) সমন্বয়ে প্রবাসীদের জন্য বীমা, শস্য বীমা, কৃষি বীমা, প্রতিবন্ধীদের জন্য বীমা, বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা এবং সর্বোপরি ব্যাংক ইন্টারেস্টসহ গৃহীত উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আশা করছি বীমা শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
 
পুঁজিবাজারে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স: 
তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বলেন, চলতি বছরে আমরা পুঁজিবাজারে লিস্টেড হয়েছি। আপনারা অবগত আছেন, পুঁজিবাজারে ইন্সুরেন্স কোম্পানি অন্যান্য লিস্টেড কোম্পানির তুলনায় ভালো প্রাইসে আছে। ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের পরিকল্পনার মধ্যে বর্তমানে ডি, আর টাওয়ারে এই ফ্লোর ক্রয় করেছি। আরো ফ্লোর ক্রয় করার পরিকল্পনা আছে। কক্সবাজারে ব্রাঞ্চ উদ্বোধন করেছি। আমাদের ইনভেস্টমেন্ট পলিসিগুলো অ্যাডোব করব, যাতে বেশি প্রফিট হয়। যার ফলে আমাদের শেয়ারহোল্ডার প্রতি বছর ভালো ডিভিডেন্ড পাবেন।
বেস্ট সিইওর অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি: 
আমাকে জেনারেল ইন্সুরেন্স খাতে বেস্ট সিইওর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। আমি এই অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আনন্দিত। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে পেরেছি, এ জন্য আমি গর্বিত। ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল ইকোনমিক অ্যাওয়ার্ড ২০২১ দুবাইতে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশসহ ১১৪টি দেশকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে পুরস্কৃত করা হয়। বাংলাদেশ থেকে ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। 
এক ঘন্টায় বীমা দাবি পরিশোধ: 
তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বলেন এক ঘন্টায় আমি ক্লেইম পরিশোধ করাই ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স এর একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমি মনে করি, শুধু ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নয়, এটা ইন্সুরেন্স ইন্ডাস্ট্রির রেকর্ড। ক্লেইম এসেছে, এক ঘন্টায় আমি ক্লেইম পরিশোধ করেছি। এটাই আমাদের সার্ভিস। আমারা ইন্সুরেন্স হোল্ডারকে তার ক্লেইমটি এক ঘণ্টার মধ্যে সেটেলড করতে পেরেছি,এটাই আমার সেবা। শুধু ব্যবসা করলেই হবে না, মানবতার দিকেও এগিয়ে আসতে হবে। বীমা মানেই হচ্ছে জনগণকে সাহায্য করা এবং  সম্পদের নিরাপত্তা দেয়া। ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে।

বীমা খাতের মান: 
বীমা খাতের অগ্রগতির জন্য কোন দিকটিতে নজরদারি দরকার জানতে চাইলে তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বলেন, বিগত দিনে বীমা খাত পিছিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় কারণ ছিল এক কোম্পানির দক্ষ কর্মীকে ছাড়পত্র ছাড়াই আরেক কোম্পানি বড় অফার দিয়ে নিয়ে যেত। এমনকি এক কোম্পানিতে দুর্নীতি করার পরও অন্য কোম্পানির বিশাল বিশাল দায়িত্বে যোগ দিয়েছেন। 
তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বলেন, বীমা শিল্পের উন্নয়নে সরকার বর্তমানে যে যুগোপযোগী পরিকল্পনাগুলো হাতে নেয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে আমি মনে করি, বীমা খাত আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে। স্বাস্থ্য বীমা, গ্রুপ বীমা, ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স এগুলো বাস্তবায়নে সরকার যেভাবে মনিটরিং করছে, তাই আশা করা যায় সামনে বীমা খাতের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। তবে দেশের জিডিপিতে বীমার অবদান বাড়াতে হবে। ভারতে বীমা শিল্প জিডিপিতে ৪ শতাংশ অবদান রাখছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা মাত্র ১ শতাংশের কাছাকাছি। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বীমা শিল্পের অবদান ৪ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সে তুলনায় অনেক পেছনে রয়েছি। এ বিষয়ে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরকে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সেবার মান: 
বীমা শিল্পে সেবার মান উন্নয়ন নিয়ে জানতে চাইলে তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বলেন, সেবার মান আরো উন্নীত করতে হবে। বিশেষ করে জীবন বীমার সেবা ঠিকমতো দিলে মানুষ খুশি হয়। এ বীমা একদিকে যেমন মানুষের জীবন রক্ষা করে, অন্যদিকে তার সম্পদও সুরক্ষিত করে। তাই আমি বারবার জোর দিয়ে বলতে চাই, গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। কোনো কোম্পানি যদি সময়মতো দাবি পরিশোধ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বীমা শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে জানতে চাইলে তালুকদার মোঃ জাকারিয়া হোসেন বলেন, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ধাপে ধাপে বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৫টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। এসব লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে একটি মার্কেট তৈরি হয়েছে। বর্তমানে আমাদের জনসংখ্যা, মাথাপিছু আয় ও শিক্ষার হার বেড়েছে। এজন্য আমি মনে করি, বীমা খাতের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে।