শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
শতকরা ৯৮ ভাগ প্রাইভেট স্কুলে খেলার মাঠ নেই , ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ
শতকরা ৯৮ ভাগ প্রাইভেট স্কুলে খেলার মাঠ নেই , ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ

শতকরা ৯৮ ভাগ প্রাইভেট স্কুলে খেলার মাঠ নেই , ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : October 22, 2022 | শিক্ষাঙ্গন

শহুরে আধুনিক জীবনের যান্ত্রিকতায় শিশুদের ওপর যে শারীরিক ও মানসিক চাপ তৈরি হয় তার ক্ষতিকর দিক এবং একটি সুস্থ, চাপমুক্ত শৈশব একজন শিশুকে কতটা ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে - এ প্রসঙ্গে আজ বাবুল্যান্ডের বাড্ডা শাখায় আয়োজিত সেমিনারে আলোকপাত করা হয়।
বাবুল্যান্ড, দেশের সবচেয়ে বড় ইনডোর প্লেগ্রাউন্ডে  প্রতি মাসে প্রায় ৪০হাজার শিশুকে পরিসেবা দিয়ে আসছে। এবং সম্প্রতি তারা এক সেমিনারের আয়োজন করে, যার মূখ্য আলোচ্য বিষয় ছিল বর্তমান সময়ে শিশুদের যথাযথ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের গুরুত্ব। বাবুল্যান্ড থেকে কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়িক অংশীদার এবং গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
সবুজ ঘাসের মাঠ, গাছপালা আর মুক্ত বাতাসের স্বাধীনতায় এই সময়টিতে শিশুদের একটু একটু করে বেড়ে ওঠার কথা। কিন্তু ইট-কাঠের দালানে ঠাসা আধুনিক শহরগুলোতে এমন সবুজের মাঠ আর মুক্ত বাতাস এখন রীতিমতো দূর্লভ হয়ে পড়েছে,। এটিই বর্তমানে দেশের অধিকাংশ শিশুর যথাযথ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের প্রধান অন্তরায়। বাবুল্যান্ড আয়োজিত সেমিনারের আলোচনায় এই প্রতীয়মান সমস্যাটিকে তুলে ধরে আলোচকগণ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন, এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় অনুসন্ধানে সকলকে আহ্বান জানান।
বাবুল্যান্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারী ও অংশীজন, বাবুল্যান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ভেন্ডর ও গণমাধ্যমকর্মীগণ।
 এ প্রসঙ্গে বাবুল্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইশনাদ চৌধুরী বলেন, “ঢাকা শহরে মাত্র ২৯৪ একর খেলার মাঠ রয়েছে যেখানে প্রয়োজন ১৮৭৬ একর, যা মাত্র ১৬%। ফলস্বরূপ, প্রতিদিন ৭৭% শিশু পর্যাপ্ত শারীরিক ব্যায়াম থেকে বঞ্চিত হয়। যা পরবর্তীতে তাদের জন্য বিভিন্ন হৃদরোগ, এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বয়ে আনতে পারে। নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর ইনডোর প্লেগ্রাউন্ডের  মাধ্যমে এই শূন্যতা পূরণ করতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে সমাজকে সহায়তায় আমাদের এই উদ্যোগ। “
বর্তমান জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক জরিপ মতে, ঢাকার ২ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ২৩৫টি খেলার মাঠ রয়েছে (যেখানে প্রয়োজন ২৪০০টি)। শুধু তাই নয়, খেলার জায়গার অভাব ঘোচাতে বর্তমানে শিশুরা উদ্বেগজনক হারে মোবাইল ও স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ করছে। অন্যদিকে,  গবেষণা প্রতিষ্ঠান উই আর সোশ্যাল ও হুট স্যুটের দেওয়া তথ্য মতে , শিশুরা প্রতিদিন অন্তত ৫ - ৬ ঘন্টা  সময় ইন্টারনেটে সময় কাটাচ্ছে, অল্প বয়স থেকে এমন বিঘ্নিত মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ পরবর্তীতে কিশোরদের মধ্যে তৈরি করতে পারে হতাশা ও আত্মহত্যা প্রবণতা । তাছারাও, আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে এ বছরের প্রথম আট মাসে আত্মহত্যা করা ৩৬৪  শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯৪ জন (৫৩.৩০%) স্কুলের । সেমিনারে বক্তাদের তথ্যবহুল আলোচনার মধ্য দিয়ে উল্লেখিত সমস্যাগুলো ছাড়াও শিশুদের সুস্থ বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো এমন অন্যান্য বিভিন্ন দিক, যেমন নগরকেন্দ্রিকতা, যানজট, শব্দ দূষণ, অপরাধের হার বৃদ্ধি ও শিশুদের নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদিও প্রতীয়মান হয়ে ওঠে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নততর ভবিষ্যৎ গঠনে সকলের অংশগ্রহণ কামনার মধ্য দিয়ে বাবুল্যান্ডের সেমিনারটি শেষ হয়।
উল্লেখ্য, যান্ত্রিক শহরে কোমলমতি শিশু ও তাদের অভিভাবকদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞায় দেশের সবচেয়ে বড় ইনডোর প্লেগ্রাউন্ড বাবুল্যান্ডের যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালে। তবে এটি কেবল শিশুদের খেলাধূলার জায়গাই নয়, বরং এর প্রতিটি শাখা এমনভাবে নকশা ও পরিচালনা করা হয় যাতে শিশুদের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক বিকাশের দিকেও মনোযোগ অটুট থাকে।
প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনামুল হক বলেন, “শিশুদের সেবা এবং সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে আমরা বাবুল্যান্ড সাইন্স তৈরি করেছি। আমাদের শাখাগুলোতে রয়েছে অভিজ্ঞ "হ্যাপি হেল্পার" যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা বৃদ্ধিতে আমরা প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করি। একইসাথে নিয়মিত সুপার ফান ইভেন্ট, ভালো ভালো অভ্যাস গড়ার চর্চা, অ্যাক্টিভিটি ক্লাস ইত্যাদিও এখানে আয়োজন করা হয়। “
বর্তমানে রাজধানীর বাড্ডা, মিরপুর, উত্তরা ও ওয়ারীতে বাবুল্যান্ডের চারটি শাখা রয়েছে এবং সম্প্রতি বাবুল্যান্ড এঞ্জেল বিনিয়োগকারী কর্তৃক ৪০ মিলিয়ন টাকার নতুন বিনিয়োগ পেয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটিকে  দেশব্যাপী তাদের সেবার মান সম্প্রসারণ করতে এবং এর ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল চালুর মাধ্যমে আনন্দকে আরও ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে ।