বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
গুলিবর্ষণের জন্য পাক প্রধানমন্ত্রীসহ ৩ জনকে দায়ী করলেন ইমরান
ইমরান খান

গুলিবর্ষণের জন্য পাক প্রধানমন্ত্রীসহ ৩ জনকে দায়ী করলেন ইমরান

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : November 03, 2022 | বিশ্ব

সেনা সমর্থন হারিয়ে ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর নতুন নির্বাচনের দাবিতে লংমার্চে নামা ইমরান খান তাকে গুলি করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীসহ ৩ ব্যক্তিকে দায়ী করেছেন।  ইমরানের দল তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) মহাসচিব আসাদ উমর জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল এ হামলার জন্য দায়ী। 

গুলিবিদ্ধ হলেও ইমরান খান আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েয়ে তার দল। তবে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
দলীয় চেয়ারম্যান ইমরান গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পিটিআইর নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে করাচি, লাহোরসহ  বিভিন্ন স্থানে সড়কও আটকে দিয়েছে তারা।
ইমরানের উপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা। তবে ইমরান খানের ওপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির ঘটনাবলীর ওপর ‘গভীরভাবে নজর রাখা হচ্ছে’ বলে জানায় ভারত।
ইমরানের বিরুদ্ধে এই বছরের শুরুতে জোট বেঁধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দল। তাতে হেরে গত এপ্রিলে ইমরানের সরকারের পতন ঘটলে প্রধানমন্ত্রী হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই মুসলিম লীগের শাহবাজ শরিফ ।
ক্ষমতা হারানো ইমরান নতুন নির্বাচনের দাবি তুলে পাকিস্তানে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ লংমার্চের ডাক দেন। গত ২৯ অক্টোবর লাহোর থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি।
রাজধানী ইসলামাবাদের পথে চার দিন পর বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে সমাবেশের জন্য তৈরি হলে সেখানে গুলিবর্ষণ হয়।
ইমরান খানের এক সময়ের স্বাস্থ্য সহকারী ডা. ফয়সাল সুলতান হাসপাতালের বাইরে সংবাদকর্মীদের বলেন, ইমরান খানের অবস্থা স্থিতিশীল। তার পায়ের এক্স-রে ও স্ক্যান করে দেখা গেছে, ভেতরে গুলির টুকরো রয়েছে।
পরে এক ভিডিওতে পাঠিয়ে বিবৃতি দেন পিটিআই মহাসচিব আসাদ উমর, যেখানে তিনজনকে এই হামলার জন্য দায়ী করা কথা বলা হয়।
পাকিস্তানের জিও নিউজের প্রতিবেদনে তিনজনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহর কথা বলা হয়। আরেকজনের বিষয়ে বলা হয়, একজন সেনা কর্মকর্তা। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মেজর জেনারেল ফয়সালের নাম উল্লেখ করা হয়।
আসাদ উমর বলেন, “ইমরান খান আমাদের বলেছেন, এই তিনজন তার উপর এই ধরনের হামলা চালাতে পারে বলে তার কাছে তথ্য ছিল। তবে আসাদ উমরের এই ভিডিও বার্তা প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা সরকার দিয়েছে।
হামলার পরই পিটিআই সমর্থকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহর বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
এদিকে হামলার সময়ের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, ইমরানের একজন সমর্থক হাতে অস্ত্র ধরে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে ধরে ফেলেছেন। পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিও নিউজ সন্দেহভাজন ওই হামলাকারীর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। যেখানে হামলাকারী ইমরানকে হত্যা করাই তার উদ্দেশ্য ছিল বলে স্বীকার করেন।
কেন এ কাজ করেছেন- প্রশ্নে ওই ব্যক্তি বলেন, আমি এটা এজন্য করেছি যে, ইমরান লোকজনকে বিভ্রান্ত করছেন। আমি তা মেনে নিতে পারছিলাম না। এজন্য তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। শুধুমাত্র ইমরানকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম, আর কাউকে না। তাকে মেরে ফেলার সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছিলাম।
কবে থেকে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, লাহোর থেকে ইমরান যখন বিক্ষোভযাত্রা শুরু করেন, তখন থেকেই তিনি ‍পরিকল্পনা করা শুরু করেন। তার সঙ্গে এই পরিকল্পনায় আর কেউ জড়িত নয় বলেও দাবি করেন ওই ব্যক্তি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, সমাবেশস্থলে দুজন হামলাকারী ছিলেন। তাদের একজনের হাতে পিস্তল এবং একজনের হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ছিল।
এদিকে হামলাকারীর সাক্ষাৎকার প্রচারের পর দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহ আদেশ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

প্রতিষিদ্ধ/এমএ