মো. ওমর ফারুক মালেশিয়া প্রবাসী একজন বাংলাদেশী শিল্প উদ্যোক্তা গ্লোবাল বিজনেস লিডার ও মোটিভেশনাল স্পীকার। আন্তর্জাতিক বাজারে নিজের স্বপ্ন ও সক্ষমতাকে তিনি ইতোমধ্যেই জানান দিয়েছেন। তিনি অ্যালো ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ওনার অ্যাসোসিয়েটস (এআইবিও অ্যাসোসিয়েটস) এর সভাপতি। তিনি ইউনাইচ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ইউনাইচ স্বাস্থ্যসেবা, গ্লাভস শিল্প, রিয়েল এস্টেট, উচ্চশিক্ষা, অ্যালো ভিত্তিক পণ্য, অ্যালোভেরা, স্বাস্থ্য- সৌন্দর্য পণ্য, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক ট্রেডিংসহ বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইউনাইচ স্বাস্থ্যসেবা শিল্পের জন্য নাইট্রিল গ্লাভস ও ল্যাটেক্স গ্লাভস তৈরি এবং রপ্তানি করার ক্ষেত্রে স্বীকৃত একটি শিল্প গ্রুপ। নিউনাইচের গ্লাভসগুলো বিশ্বব্যাপী ১৫ টিরও বেশি দেশ যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভিয়েতনাম, ইউরোপ, চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে রপ্তানি করা হয়। পণ্যের গুণমান, সময়মত ডেলিভারি এবং চমৎকার সুনামের সাথে গ্রাহকসেবা দিয়ে যাচ্ছে ইউনাইচ। উন্নত দেশগুলোতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ইউনাইচকে তাদের পছন্দের নির্মাতা হিসেবে অত্যাধিক পছন্দ করে। এছাড়াও মোঃ ওমর ফারুক মালয়েশিয়া থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ, পান রপ্তানি করেন বিশ্বের ৫টিরও বেশি দেশে।
২০০৭ সালে মোঃ ওমর ফারুক ইউনাইচ এডুকেশন (উচ্চশিক্ষা কনসালটেন্সি ফার্ম) শুরু করেন, তিনি ইউনাইচ টুডে একটি মিডিয়া সংস্থারও কর্ণধার। মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করার ইচ্ছা এবং অভিপ্রায় রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের ব্যাপক শিক্ষামূলক পরিষেবা প্রদানের জন্য ইউনাইচ এডুকেশন হল মালয়েশিয়ার অন্যতম সেরা এবং উচ্চ রেটযুক্ত শীর্ষস্থানীয় স্টুডেন্ট ভিসা কনসালটেন্সি ফার্ম। ইউনাইচ এডুকেশনের প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থী এবং গ্রাহকরা যাতে ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করার সর্বোত্তম সুযোগ পায় সেটি নিশ্চিত করা। সম্প্রতি তার বিভিন্ন উদ্যোগ ও সফল হওয়ার লড়াই নিয়ে কথা বলেন প্রতিষিদ্ধ’র সঙ্গে।
ওমর ফারুক মনে করেন, অর্জন যত বড়ই হোক না কেন, এর শুরু হয় খুব ছোট কিছু দিয়ে। একজন মানুষ যতই বিদ্যান হোন না কেন, অক্ষরজ্ঞান দিয়েই তাঁর যাত্রা শুরু হয়। একবারে কেউ বড় লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না, ধাপে ধাপে, ধীরে ধীরে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আমরা অনেক সময়ে বড় কোনও লক্ষ্য ঠিক করে আবার তা থেকে পিছিয়ে আসি, কারণ আমরা লক্ষটির বিরাটাকার দেখে ভয় পেয়ে যাই। নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস করা ছাড়া সফল ও সুখী হওয়া সম্ভব নয়। নিজের ওপর বিশ্বাস বা আত্মবিশ্বাস মানুষকে আশা করার সাহস যোগায়। আত্মবিশ্বাস আর আশার ওপর ভর করে একজন হতদরিদ্র মানুষ বিরাট ধনীতে পরিনত হতে পারে; একজন দুর্বল মানুষ অনেক বড় বিজয় লাভ করতে পারে; একজন মূর্খ মানুষ বিরাট জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
নিজের যোগ্যতার ওপর সত্যিকার বিশ্বাস থাকলে কোনও ধরনের নেতিবাচক অবস্থা মানুষকে বিচলিত বা দুর্বল করতে পারবে না। কাজেই, সব সময়ে নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস রাখা জরুরি। আপনি যে পরিস্থিতিতেই পড়েন না কেন বিশ্বাস করুন তা মোকাবেলা করার যোগ্যতা আপনার আছে। তাহলেই দেখবেন সামনে অনেক পথ খুলে যাচ্ছে।
ওমর ফারুক বলেন, ২০১৭ সালে আমেরিকান কোম্পানি ফরএভার লিভিং প্রোডাক্টস এর বিজনেস শুরু করি এবং এখন মালয়েশিয়া, সিংগাপুর এবং ব্রুনাই, এই রিজিওনের টপ বাংলাদেশী ফরএভার বিজনেস ওনার।
বড় লক্ষ্যটিকে যদি ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে নিয়ে এক সময়ে শুধু একটি ধাপেই নজর দেয়া হয় শুধু সেটা নিয়েই কাজ করা যায়- তবে ব্যাপারটি এতটা ভীতিকর থাকে না। একটি ধাপ পূরণ হওয়ার পর তবেই পরবর্তী ধাপের দিকে তাকান- সেটা পূরণ হয়ে গেলে তার পরের ধাপের দিকে তাকান। ওপাশে কি আছে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তার কোনও প্রয়োজনই নেই। শুধু মাথায় রাখা প্রয়োজন এই অনেকগুলো ছোট ছোট ধাপই একসাথে মিলে একটি বড় লক্ষ্য পূরণ করতে যাচ্ছে। এই মনোভাব নিয়ে কাজ করলে দেখবেন, আপনি যে কোনও বড় লক্ষ্য পূরণের পথে নির্ভয়ে এগিয়ে যেতে পারছেন। স্বপ্ন যখন অনেক বড়, স্বপ্ন পূরনের জন্য যখন নিরন্তর পথচলা, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস তখন তাকে আটকানো সত্যি দুঃসাধ্য ব্যাপার!
ওমর ফারুক বলেন, যাদের মধ্যে নিজের ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করে পৃথিবীকে দেখিয়ে দেয়ার বদলে ৯টা-৫টা কাজ করার, অথবা নির্দিষ্ট সময় কাজ করে টাকা ইনকাম করার মানসিকতা থাকবে, তারা জীবনেও সফল উদ্যোক্তা হতে পারবে না। উদ্যোক্তা হতে চাইলে প্রথমেই এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রতিদিন যতক্ষণ কাজ করা সম্ভব, ততক্ষণ কাজ করে যেতে হবে। অন্যদের দেখে বা অন্য কোনও ভাবে যদি নিজের ভেতরে দিনে ঘড়ি ধরে একটি নির্দিষ্ট সময় কাজ করার পর ছুটি নেয়ার মানসিকতা আপনার মাঝে আছে কি না সেটা খুঁজে বের করুন এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে পরিবর্তন করুন।
উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণার চাবিকাঠি হিসেবে ওমর ফারুক বলেন, উদ্যোক্তা হয়েছেন, কিন্তু ব্যর্থতার স্বাদ পাননি, এমন মানুষ মনেহয় একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সফল উদ্যোক্তা হওয়ার একটি প্রধান শর্তই হল, আপনাকে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়ে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। হয়তো সব হারিয়ে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ব্যর্থ হওয়ার পরও যারা হাল না ছেড়ে কাজ করতে থাকেন, এবং দ্রুত ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন তাঁরাই আসলে শেষ পর্যন্ত সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন। ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে আবার সাফল্যের দিকে যাত্রা করার জন্য মূলত কিছু মানসিক বিষয় চর্চা করা দরকার। যেমন - মেডিটেশন করা ও যার যার ধর্ম অনুযায়ী ইবাদত করা, নিজেকে একান্তে সময় দেয়া ও নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বেশি মনযোগ দেয়া, নতুন কিছু শেখা এবং নতুন উদ্দমে শুরু করা। মানুষ যত বড় ব্যর্থতা আর হতাশার মাঝেই পড়ুক না কেন, সেখান থেকে বের হয়ে আসার এবং আবারও শুরু করার শক্তি তার ভেতরেই আছে। নিজের ভেতরের নেতিবাচক চিন্তাগুলোই আসলে আমাদের পেছনে টেনে রাখে। এই চিন্তাগুলোই আমাদের নতুন করে শুরু করতে দেয় না।
ইউনিসের পথচলার গতিধারা প্রসঙ্গে ওমর ফারুক বলেন, অস্ট্রেলিয়ার মার্কেটেও লীড দিতে পথ চলা শুরু হলো, জুন ২০২২ হতে সিপমেন্ট শুরু হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশী হয়ে মালয়েশিয়া হতে ওয়ার্ল্ডওয়াইল্ড গ্লাভস এক্সপোর্ট বিজনেস এর শুরুটা একদমই সহজ ছিলো না। কিন্তু ৩ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় এখনকার চিত্রটি অনেকটাই গল্পের মতো। এভাবে রচিত হবে আরো অনেক সফল গল্পে, হবে নতুন নতুন রেকর্ড এর জন্ম।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রসঙ্গে মো. ওমর ফারুক বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে তরুণের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৬ লাখ যা মোট জনসংখ্যার ৩০%। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আগামী ৩০ বছর জুড়ে তরুণ বা উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে। বাংলাদেশের জন্য ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করার এটাই সব থেকে বড় হাতিয়ার। জ্ঞানভিত্তিক এই শিল্প বিপ্লবে প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে দক্ষ মানবসম্পদই হবে বেশি মূল্যবান। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বিপুল পরিমাণ মানুষ চাকরি হারালেও এর বিপরীতে সৃষ্টি হবে নতুন ধারার নানাবিধ কর্মক্ষেত্র।এই বিপ্লবের ফলে দেশের মানুষের আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবন মান বাড়বে। এছাড়া মানুষ তার জীবনকে বেশি মাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর করবে।আমদানি - রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ থেকে সহজতর হবে। ফলে বর্হিবিশ্বের আধুনিক জীবন ও জীবিকার উপকরণ দ্রুত পৌঁছে যাবে মানুষের হাতে। দেশে বর্তমানে সাড়ে ছয় লাখের বেশি তরুণ তরুণী অনলাইনে কাজ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। দেশিয় হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার রপ্তানির হার দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং এর বাজার সামনে আরো বিস্তৃত হবে। অনলাইন প্লাটফর্মকে পুঁজি করে কর্মসংস্থানকারীদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গী করতে দেশের সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতাকে আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দেশের নির্মিত ও নির্মাণাধীন হাইটেক পার্কগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তবে এই বিপ্লবের ফলে গোটা দুনিয়ার একটি বিশাল অঙ্কের মানুষের কাজ হারানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও অতি মাত্রায় লক্ষণীয় হতে পারে। মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়গুলোও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সমাজে বৈষম্য তৈরি করতে পারে। যেমন ‘কম-দক্ষতা স্বল্প-বেতন’ বনাম ‘উচ্চ-দক্ষতা উন্নত-বেতন’ কাঠামো অর্থনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেজ্ঞ মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, ইন্টারনেট ও অন্যান্য প্রযুক্তির মধ্যে অব্যাহত যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি যন্ত্রগুলো আপডেট করার পাশাপাশি প্রযুক্তির নিরাপত্তা ঝুঁকি আপডেটের মাঝে সমন্বয় সাধনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পুরো জীবনব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষ, প্রকৃতি এবং সমাজের সর্ম্পক বৃহত্তর রূপান্তর হতে পারে।