শহীদ মিনার কোন মাজার বা দরগাহ নয়। এখানে কারো কবর নাই। ভাষা শহীদদের কবর যেখানে আছে সেখানে জেয়ারত করা যাবে। দোয়া করা যাবে। কিন্তু শহীদ মীনারে কেন?
ফেসবুকে একটা ছবি দেখলাম শহীদ মিনারে একদল লোক নামাজ পড়ছেন। তাদের বক্তব্য শহীদদের জন্য নামজ পড়ে দোয়া করা ছাড়া অন্য সবকিছুই নিরর্থক। তাই তারা নামাজ পড়ছেন। দোয়াও নিশ্চয় করেছেন। মানলাম ঠিক আছে মানুষ মানুষের জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করবেন তারচেয়ে উত্তম কাজ অন্তত সে মৃত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের জন্য আর কি হতে পারে। কিন্তু সমস্যা অন্য যায়গায়।
প্রথমতঃ শহীদ মিনার কোন মাজার বা দরগাহ নয়। এখানে কারো কবর নাই। ভাষা শহীদদের কবর যেখানে আছে সেখানে জেয়ারত করা যাবে। দোয়া করা যাবে। কিন্তু শহীদ মিনারে কেন?
দ্বিতীয়তঃ ভাষা শহীদেরা প্রান দিয়েছেন বাংলা ভাষার জন্য। যে ভাষায় বাংগালী মুসলমানরা ছাড়াও অন্য ধর্মের লোকেরা ও কথা বলে। তারা ও শহীদদের সম্মান করে। এটা যদি আমরা মুসলমানরা দখল করে নিই তাহলে তারা কোথায় যাবে? নাকি আমরা তাদেরকেও শহীদ মীনারে পূজা বা অন্যান্য ধর্মীয় আচারাদি করতে দেব?
তৃতীয়তঃ শহীদ মিনার একটা স্মৃতিস্তম্ভ মাত্র। অনেকটা symbolic এতে ধর্মীয় অনুভুতি টেনে আনা কতটা যৌক্তিক?
চতুর্থতঃ যদি দোয়া করাই একমাত্র স্বার্থক হয়, তাহলে প্রভাতফেরি, কবিতাবৃত্তি, পুস্পস্তবক অর্পণ, একুশের গান এসব বন্ধ হয়ে যাবে? নাকি এসব শুধু অন্য ধর্মের বাঙালীরা করবে?
কেন জানি মনে হচ্ছে এটা হয় বোকামি নয় বাড়াবাড়ি, নয় ষড়যন্ত্র। এতে একুশের অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তির চেতনা বিনষ্ট হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া অতি উৎসাহিরা শহীদ মিনারকে মাজারে রুপ দেয়ার চেষ্টা করলেও অবাক হবনা। আরেকটা কথা আমরা শহীদ মীনারে যাই আমাদের জন্য। ভাষা শহীদদের এসবের একটুও দরকার নেই - এমনকি দোয়ার ও।তারা ফুল আর শ্রদ্ধা পাওয়ার জন্য জীবন দেননি। আর শহিদের দোয়া লাগবে কেন, যেখানে জানাজার ও প্রয়োজন হয়না! দয়া করে এসব বন্ধ করার জন্য অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া হোক।