শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
ক্লিনিকে নিয়ে রোগীর মলদ্বারের নাড়ি কেটে ফেললেন চিকিৎসক
ক্লিনিকে নিয়ে রোগীর মলদ্বারের নাড়ি কেটে ফেললেন চিকিৎসক

ক্লিনিকে নিয়ে রোগীর মলদ্বারের নাড়ি কেটে ফেললেন চিকিৎসক

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : January 26, 2022 | অপরাধ

ফরিদপুরে আল-মদিনা ও আরামবাগ হাসপাতালের পর এবার পিয়ারলেস হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচার করার সময় এক গৃহবধূর মলদ্বারের নাড়ি কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম উৎপল নাগ। তিনি ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। ওই গৃহবধূ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের পাঁচতলায় নারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক বরাবর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী আব্দুল মান্নান ব্যাপারী। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। তার বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার নিমতলা গ্রামে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তার স্ত্রী হাসনা বেগম (৩৪) পেটে ব্যথা অনুভব করলে গত ২২ ডিসেম্বর ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গাইনি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান আব্দুল মান্নান। তাকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডা. উৎপল নাগের কাছে রেফার করা হয়। এসময় ডাঃ উৎপল নাগ জানায় রোগিকে দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে বাঁচানো যাবে না।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ডাঃ উৎপল নাগ তাদের বলেন, বিএসএমএমসি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করাতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে এবং এই সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। পরে তিনি তার প্রাইভেট চেম্বারের  ভিজিটিং কার্ড দিয়ে তাদের শহরের রথখোলায় পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত পিয়ারলেস হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, একটু পরেই তিনি ওই হাসপাতালে যাবেন।
রোগীর বাবা হাশেম মল্লিক বলেন, ডা. উৎপল নাগের কথামতো তার মেয়ে হাসনাকে পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনটি পরীক্ষা করে ২৬০০ টাকা নেওয়া হয়। ওইদিন সন্ধা ৬ টার সময় অস্ত্রোপচার করার কথা বলে রোগীর স্বজনদের অনুপস্থিতেই বিকালে অস্ত্রপাচার করা হয়। এই অস্ত্রোপাচার ডাক্তার নাকি নার্স করেছেন জানেনা রোগীসহ রোগীর স্বজনরা। এই অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচারে ২৬ হাজার টাকা নেন ডাঃ উৎপল নাগ।
তিনি আরও বলেন, অস্ত্রোপচারের চারদিন পর হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার সময় হাসনা বেগমের সেলাই কেটে ড্রেসিং করার সময় মলদ্বার দিয়ে মল বের হতে থাকে। বিষয়টি ডা. উৎপল নাগকে জানানোর পর তিনি ফের অস্ত্রোপচার করার কথা বলেন। এজন্য আরও এক লাখ টাকা লাগবে বলেও জানান তিনি। এরপর অসুস্থ হাসনা বেগমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রোগীর স্বজনরা জানান, হাসনা বেগম দিন দিন শীর্ণকায় হয়ে যাচ্ছেন। স্ত্রীর চিকিৎসার পেছনে ছুটতে গিয়ে আয়ও বন্ধ মান্নার ব্যাপারীর। এ অবস্থায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারটির।
এ ব্যাপারে জানতে ডা. উৎপল নাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হাসনা বেগমকে বিএসএমএমসি হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করানোর পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। সেই সঙ্গে ফের অস্ত্রোপচার করাতে এক লাখ টাকা দাবির অভিযোগও অস্বীকার করেন।
ডাঃ উৎপল নাগ বলেন, ওই রোগীর অ্যাপেন্ডিসাইটিস পেকে গিয়েছিল সৃষ্টিকর্তা তার হাত দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা কী কারণে এসব অভিযোগ করছে তা বুঝতে পারছেন না তিনি।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ওই রোগীর খোঁজ নিয়েছি। তার চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হবে না। তিনি বলেন, ডা. উৎপল নাগের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিভিল সার্জন ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই পিয়ারলেস হাসপাতালের বিরুদ্ধে আগেও এধরনের অভিযোগ রয়েছে।
 


পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ