সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
 জাতীয় ঐক্যের কাছে সকল স্বৈরাচার মাথা নোয়াতে বাধ্য
মজিবুর রহমান মন্জু , সদস্য সচিব, এবি পার্টি

জাতীয় ঐক্যের কাছে সকল স্বৈরাচার মাথা নোয়াতে বাধ্য

প্রকাশের সময় : February 02, 2022 | বাংলাদেশ

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিষিদ্ধের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশে নতুন উদীয়মান রাজনৈতিক দলের অন্যতম এবি পার্টির (আমার বাংলাদেশ পার্টি) সদস্য সচিব, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মজিবুর রহমান মনজু। উক্ত সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন প্রতিষিদ্ধের প্রধান প্রতিবেদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার। 

প্রতিষিদ্ধঃ  বর্তমান যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তা থেকে কীভাবে উত্তরণ হবে বলে আপনি মনেকরেন? 

মজিবুর রহমান মনজুঃ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমতঃ অবৈধভাবে ক্ষমতায় আরোহন করা বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে একটি অন্তবর্তীকালীন জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের কাজ হবে সরকারের পদত্যাগের পর পরই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহ সার্বিক বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা। তারপর সবার সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে সাংবিধানিক নীতি মেনে কাজ করার অবস্থানে নিয়ে যাওয়া অর্থাৎ সরকার, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। এবং অতঃপর তাদের কাজ হচ্ছে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। 
আপনি জানেন যে, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা সহ সকল রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউশন কে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে । ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে তারা একদলীয় স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছে।  গুম, খুন, বিচার ব্যবস্থার বিপর্যয় ও ভয়াবহ দূর্নীতির পাশাপাশি করোনা’র দূঃসময়ে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে যে হযবরল অবস্থা তাতে দেশ ক্রমান্বয়ে অকার্যকর রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। 
এই সামগ্রিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সর্বপ্রথম দরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহি মূলক সরকার প্রতিষ্ঠা। তা নিশ্চিত করতে পারে নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জাতীয়পার্টি কোন দলীয় সরকারের অধীনেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলোই ছিল অপক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য এটা বাংলাদেশে প্রমানিত সত্য। 

প্রতিষিদ্ধঃ একটি মহল মনেকরছে এবি পার্টি প্রতিষ্ঠা নাকি জামায়াতের নাটকীয় একটা কৌশল’ এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন? 

মজিবুর রহমান মনজুঃ  এ প্রশ্নের জবাব আমি বহুবার দিয়েছি। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এবি পার্টি একটি নতুন ধারার স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল। কারও নাটকীয় কৌশল বা গোপন পলিসির অংশ এবি পার্টি নয়। আমাদের বিরুদ্ধে এটা একটা পরিকল্পিত অপপ্রচার। মজার ব্যপার হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে দুটি পক্ষ পরস্পর বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। একপক্ষ বলছেন আমরা সরকারের ইংগিতে জামায়াত ভাঙ্গার জন্য দল গঠন করেছি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ফতোয়া দিয়ে আমাদেরকে মুনাফেক, ধর্ম থেকে বিচ্যুত, পথভ্রষ্ট ইত্যাদি বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। একটি দলের প্রধান তাদের আভ্যন্তরীণ ভার্চুয়াল মিটিং এ এবি পার্টির লোকেরা যেন পরিপূর্ণ দ্বীনের পথে ফিরে আসতে পারে সেজন্য দোয়া করার আহবান জানিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন এবি পার্টির লোকজন ধর্ম বা দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। 
অপরদিকে আরেক পক্ষ বলছে আমরা নাকি জামায়াতের কৌশলগত বি টিম। তাদেরকে যখন প্রশ্ন করা হয় কেন তারা এটা বলছেন? তারা কোন যৌক্তিক উত্তর দিতে পারেননা। তারা বলেন আমাদের নেতৃত্বস্থানীয় কেউ কেউ আগে জামায়াত করতেন তাই তারা এমনটা মনেকরেন। আমি তাদেরকে তখন বলি শেখ মুজিবুর রহমান তো মুসলিম লীগ করতেন, মতিয়া চৌধুরী, মীর্যা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন,  
কই তাদের বর্তমান দলকে তো আপনারা কারও নাটকীয় কৌশল বলেন না! 

প্রতিষিদ্ধঃ  দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা বর্তমানে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি স্বপ্ন মাত্র, এর বাস্তবায়নে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর কেমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনেকরেন? 

মজিবুর রহমান মনজুঃ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল তার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সেই গণ-আন্দোলনে এরশাদের পতনের পর কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৯১ সালের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অপেক্ষাকৃত উত্তম  নির্বাচন। সেদিন যেভাবে ডান-বাম-সেক্যুলার-জাতীয়তাবাদী-ধর্মীয় সকল পক্ষ একদাবীতে যুগপৎ সংগ্রাম করেছিল এখনও সে পদক্ষেপই আপাতঃ সমাধান। জাতীয় ঐক্যের কাছে সকল স্বৈরাচার মাথা নোয়াতে বাধ্য। তবে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে স্বৈরাচার হটিয়ে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে নিজেরাই আবার স্বৈরাচার বনে যাওয়ার যে প্রবণতা তা বন্ধ করতে হবে।  জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি কে স্থায়ী  নীতি করার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছা, প্রয়োজনে এর জন্য রেফারেন্ডাম নেয়া যেতে পারে।


পূর্বের সংবাদ
পরের সংবাদ