সালমা মুক্তা পেশাগতভাবে একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। ২২তম বিসিএস- এ শিক্ষাক্যাডারে তিনি যোগদান করেছেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন সরকারি তিতুমীর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে।সরকারি তিতুমীর কলেজের বিতর্ক ক্লাবের মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিন বছর ধরে। এছাড়া কলেজের অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও তিনি জড়িত । সরকারি তিতুমীর কলেজে শিক্ষক পরিষদে তিনবার ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আন্তঃক্যাডার বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক - এ দ্বিতীয়বারের মতো এখন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। অফিসার্স ক্লাব,ঢাকা'র সাংস্কৃতিক উপকমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। সম্প্রতি তার সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্ম নিয়ে তিনি কথা বলেন প্রতিষিদ্ধের সঙ্গে।
সালমা মুক্তা বলেন, আমি মূলত একজন সংস্কৃতিকর্মী। যদিও সৃজনশীল সবরকম কাজের মাঝে ডুবে থাকতেই আমার আনন্দ। উপস্থাপনা আমার অনুভবের অবলম্বন। তিনদশক ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগ্রহ ও ভালোবাসায় উপস্থাপনা করে যাচ্ছি। সংসার, পেশাগত ও সামাজিক দায়-দায়িত্ব এবং অন্যান্য কর্মকান্ডের পাশাপাশি উপস্থাপনা চালিয়ে যাচ্ছি পরম আনন্দে। উপস্থাপনার মাঝে আমি অসীম আনন্দ ও প্রেরণা খুঁজে পাই। এই কাজটি মনে অক্সিজেন দেয়। সাহিত্যচর্চা করলেও আমি নিয়মিত লেখক নই। স্কুলে পড়ার সময় দেয়াল পত্রিকায় লিখতাম। লেখালেখি করেছি কলেজ বার্ষিকী ও ম্যাগাজিনে। এরপর লেখালেখি বলতে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক ও ভোরের কাগজে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করেছি বছর তিনেক। ইত্তেফাকে কলাম লিখতাম। ভোরের কাগজে প্রতি শুক্রবার বিশিষ্টজনদের সাক্ষাৎকার নিতাম পূর্ণপৃষ্ঠা জুড়ে। একসময় পাক্ষিক অনন্যাতেও কাজ করেছি অনুবাদক হিসেবে। দি গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে বাংলা অনুবাদ করতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জাতীয় পর্যায়ে রচনা প্রতিযোগিতায় আটবার আমি পুরস্কৃত হই। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল ও বিভিন্ন সংস্থায় রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার অর্জন করেছি। ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতারে কাজ করছি। বিশেষ করে বাংলাদেশ বেতারে নারীবিষয়ক "বহ্নিশিখা" অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, শিশুদের অনুষ্ঠান "কলধ্বনি " অনুষ্ঠান গ্রন্থণা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা," মহানগর" ও "বার্ষিকী" অনুষ্ঠানে কথিকা পাঠ,নারীকন্ঠ অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছি।বিভিন্ন অনুষ্ঠান গ্রন্থণা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেছি। এখন প্রতি মঙ্গলবার দর্পণ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান গ্রন্থণা করছি। তবে হ্যাঁ,আমি নিয়মিত পড়াশোনা করি। শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা আগ্রহ ও মগ্নতা নিয়ে পড়ে থাকি। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন এমফিল করছিলাম, তখন কাজল ব্রাদার্স নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তখন নবম- দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পৌরণীতির বই লিখেছিলাম। এরপর অন্যান্য প্রকাশনার সাথেও সহকর্মীদের সঙ্গে সম্মিলতভাবে লিখেছি।
তিনি বলেন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শামসুন নাহার হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনে দ্বিতীয়বারের মতো এখনও সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে রয়েছি। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনে (ডুপসা) দুইবার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি। অফিসার্স ক্লাব,ঢাকা'র সাংস্কৃতিক উপকমিটি-তে কাজ চলমান। এছাড়াও ভৈরব সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। এসব সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত রয়েছে আজও। বিসিএস সাধারণ শিক্ষাক্যাডারের চারমাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাপনা একাডেমি, (নায়েম)- এ অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রশিক্ষণে আমি ডিরেক্টর জেনারেল অ্যাওয়ার্ড (অল রাউন্ড অ্যাওয়ার্ড) পেয়েছি।
সালমা মুক্তা বলেন, শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ছয় বছর বয়সে কচিকাঁচার মেলা সংগঠন দিয়ে যাত্রা শুরু করি। কচিকাঁচার মেলায় গান,কবিতা আবৃত্তি শেখা ছাড়াও মঞ্চনাটক করতাম। সেই পথচলা আজ অব্দি রয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে, মুক্তচিন্তার ধারক হিসেবে, সচেতন মানুষ হিসেবে আমি চাইব সুস্থ,শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ হোক। বিশেষ করে তরুণ সমাজ সুস্থ সংস্কৃতিচর্চার আস্বাদ লাভ করুক। কূপমন্ডুকতা, কলুষতা থেকে মুক্ত থাকুক পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্র।