পাতার রঙের সবুজ, মানুষের অন্তরের কথা
চুপ আছে, চুপ থেকো, চুপ থাকা ভালো
পাতার রঙের সবুজ মরে যাচ্ছে
জনারণ্যে, চুপ থেকে থেকে, চুপ থেকে থেকে
শুকনো পাতার নিশ্চুপ
সে হচ্ছে হাড় মাংসের ইতিহাস
রাষ্ট্র বলছে মানুষদের চুপচাপই কেবল মানায়।
দেখছ না, রাষ্ট্র বলছে চুপ থাকতে;
ধর্ম বলছে চুপ থাকতে
গোত্র বলছে চুপ থাকতে
একদম চুপ, পাথরের মতো চুপ।
সেই চুপসে থাকা রাষ্ট্রের ভেতর
মানুষেরা অর্বাচিন, অন্তরীন;
শুধু পাহাড়ের মতো চুপ থাকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
পাহাড়ের ফাঁপা সবুজের সাক্ষী
যে সবুজ মৃত্তিকার হয়ে কথা বলে
ইতিহাস-অনাবিল রক্তের ভাষা যা-যা শুনবে
ভুলে থাকা সবচেয়ে নিরাপদ;
একদম ভুলে থাকা সত্যি সত্যি নিরাপদ।
যা দেখবে, না দেখার ভাবে বিশ্রামে ঘুমাবে
সেটাও রাষ্ট্রীয় কল্যাণ এবং নিরাপদ।
রাষ্ট্রযন্ত্রের মেশিনে কিছু সম্পাদিত
কথা বলা যায়, যে বলবে, সে রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠতম
কবি, উপন্যাসিক, গল্পকার, ইত্যাদি-ইত্যাদি
যথাযথ সম্মানিত সম্মানে পদকে ভূষিত হবেন।
কবি নজরুল ইসলাম কখনো
রাষ্ট্রের নিকট চুপসে ছিল না
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কখনো
রাষ্ট্রের নিকট চুপসে ছিল না
কবি জীবনানন্দ দাস কখনো
রাষ্ট্রের নিকট চুপসে ছিল না
এরকম অনেকেই চুপসে না থাকার দহনে
শোকাশ্রু জীবনে কাটিয়েছে বহুকাল
বাংলাদেশের জলছাপ ব্যথা হৃদয় গহীনে
জনজীবনে সদৃশ কবি ও কবিতার খরতাপ।
কবি আল মাহমুদ ও জয় গোস্বামী
তাঁরা দুজনেই শুকনো পাতার অক্ষরে
ঝরঝরে অগ্নি কবিতার ময়ূরে
ফুটেছে রোদ্দুরে আগুনের পুষ্পকলি।
শিল্পী এস এম সুলতান অগ্নি বিচ্ছুরিত ধ্যানে
আগুন রঙের গহীনে শক্তির অদৃশ্য
নাড়িভুড়ি টেনেটুনে বানালেন সূর্যের আয়না
রোদ্দুর কিরণে বাঙালিয়ানার শরীর ও মাটি।
তবুও তো মেঘ হয়, অন্ধকার নেমে আসে
রাক্ষসের দল, ছুটে আসে রাজ-দরবারে
রাজকবি ও রাজ-ছবির অলংকারে
শিল্প এখন বেশ্যালয়ের রঙিন বস্তু।
অগ্নি পোড়া মানুষের বুকে বাঁধা সূর্য
ওই দেখো কবি নজরুল পুড়ছে
ওই দেখো কবি সুকান্ত পুড়ছে
ওই দেখো কবি জীবনানন্দ পুড়ছে
ওই দেখো জীবন্ত পুড়ছে
কবি জয় গোস্বামী এবং শিল্পী ধ্রুব এষ;
আমিও একটু-আধটু পুড়েছি জলন্ত জীবনে।
রাষ্ট্রের টেবিলে না থাকলে পোড়াবেই তো
কবি ও ছবির অন্ত্যমিলে গাঁথা সাদৃশ্যকরণ।
কেউ কেউ বলছে অকথা-কুকথা
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় বান্ডিলে-বান্ডিলে দৌড়াচ্ছে
একগুচ্ছ বইপত্তর
মনে-মনে, কানে-কানে পরস্পর যুগসন্ধি
আর শলাপরামর্শে জমা হতে হতে
আগে-পরে শ্রেষ্ঠত্বের বাঁশি বাজিয়ে চেয়ারে বসেছে বহাল তবিয়তে একদল অজগর সাপ।
দ্রোহের কথা, অগ্নির কথা
দীপ্ত সমস্বরে বলবার কেউ নেই,
ভুলে আছে, ভুলে গেছে, ভুলে যাচ্ছে
একে একে আমরা সবাই চুপসে থাকার মানুষ।
সবুজের ভেতরের রক্তের-কথা, সূর্যের-কথা বিকিরণে সচ্ছ, দাবদাহ, ঘর্মপাত পরিশ্রমের অষ্টপ্রহর, রাত্রের জঙ্গলে যা পাবে-মানবে কে-কি চাচ্ছে বুঝবে কেমনে?
সব-পথ অবরুদ্ধ, দুর্বল মননে
না বুঝলে তাও ভালো
বেশি বুঝার লোক তো ইন্টেলেকচুয়ালরা;
টকশোতে যাবে, বোঝাবে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব।
ওই দেখ দিবালোকে শুয়োর দৌড়চ্ছে
দুপায়ে হাঁটা চার পায়ের শুয়োরের দল;
পালে-পালে ঘুরেফিরে একরাত্রে
শিয়ালের হাঁকডাক শুনি;
ক্ষুধার্ত কুকুর লাপাত্তা
ভোরে উঠে দেখি খড়ের ভেতর দড়ি আছে
দুগ্ধ গাভী নেই, বাছুরও নেই, গোয়ালঘর শূন্য গোবর-মূত্রে গৃহস্থ বিষাদ
হাঁস ও মুরগী কিছুই তো নেই
দুধের পাতিল শূন্য গৃহকোণে, শিশুরা কাঁদছে
শুধু বিড়ালটি মিউমিউ করছিল ঘরে
বারান্দায়, বাহিরে, বাড়ির উঠোনে
রাজনীতির মাঠেও দেখি বিড়ালের মিউমিউ