মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০২৪
আবাসন অঙ্গনে ইনটেক ও তারুণ্যে ফখরুল দুটি অপ্রতিদ্বন্ধি নাম
এম ফখরুল ইসলাম

আবাসন অঙ্গনে ইনটেক ও তারুণ্যে ফখরুল দুটি অপ্রতিদ্বন্ধি নাম

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
প্রকাশের সময় : May 31, 2022 | গণমানুষের কথা

এম. ফখরুল ইসলাম দেশের সফল একজন আবাসন উদ্যোক্তা ও দেশের প্রতিষ্ঠিত রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ইনটেক প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ফখরুলের জন্ম ১৯৮৪ সালে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া গ্রামে। যা এখন ‘লন্ডনি পাড়া’ নামে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত। তার পড়াশোনার যাত্রাটা ওলামা বাজার মাদরাসায়। এরপর সেখান থেকেই পর্যায়ক্রমে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর চট্টগ্রাম দারুল-মা আরিফ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক করেন ফখরুল।

আবাসন শিল্পে দীর্ঘ সময় ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি এবং তার ইনটেক প্রপার্টিজ। এ ছাড়াও বেশ কিছু সামাজিক সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। পড়াশোনার সময় নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন ফখরুল। পাঠাগারসহ নানা ধরনের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেও নিজ এলাকায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। গ্রামের কৃষকদের সাথে নিয়ে নাছির উদ্দিন সেচ অ্যান্ড স্কিম (ইরিগেশন) প্রকল্প নামে ২০০৭ সালে সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ১৫০ হাজার শতক জমি চাষাবাদের আওতায় এনে কৃষকদের মাঝে সম্ভাবনার ঐক্য সৃষ্টি করেন ফখরুল।

ফখরুল বলেন, এখনো সামাজিক কাজগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করছি এম হাশিম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত নানা আয়োজনে অসহায় মানুষের পাশে থাকি। এ ছাড়া খিদমাহ ট্রাস্ট, সোনাগাজী বহুমুখী সমবায় সমিতিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি ।

পড়াশুনা শেষ করে প্রথম কর্মক্ষেত্রেই রিয়েল এস্টেস্টের দারুণ অভিজ্ঞতা থাকায় এ সেক্টর নিয়ে ভাবতে শুরু করেন ফখরুল। চার পরিচিত জনকে তার নবযাত্রার সঙ্গী করে নেন। এরমধ্যে এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডের তৎকালীন শ্যামলী ব্রাঞ্চ ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন ভূঁঞা, বৃহত্তর কল্যাণপুর সমাজকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, চাচাতো ভাই আশরাফ উদ্দিন এবং নাসির উদ্দিন। আবাসন শিল্পের সাথে যারা যুক্ত আছেন, যারা নতুন এ শিল্পের সাথে যুক্ত হতে আগ্রহী তাদের জন্য এম. ফখরুল ইসলাম নিঃসন্দেহে এক দারুণ প্রেরণা।

ফখরুল বলেন, পড়াশোনা শেষে আমি যে প্রতিষ্ঠানে জব করতে থাকি, হুট করে একসময় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। মাথার উপর তখন অনেক চাপ। যেহেতু পরিচিতরা আমার মাধ্যমে এখানে এসেছিলেন। তাদের সঠিকভাবে সব কিছু বুঝিয়ে দিতে পারা আমার প্রথম পরীক্ষা ছিলো। আমি সেটা সফলভাবে পেরেছিলাম, তাতে আমার পরিচিত মহলে সুনাম বৃদ্ধি পায়। একসময় পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে বিদেশে পাঠাবে, আমি মোটেও রাজি ছিলাম না। এমন অবস্থায় নতুন কিছুর সন্ধানে ঢাকা আসি। আগের চাকরিস্থলে রিয়েল এস্টেস্টের দারুণ অভিজ্ঞতা থাকায় এ সেক্টর নিয়ে ভাবতে শুরু করি।

আমরা ইনটেক প্রপার্টিজের কাজ শুরু করার পরপরই দ্রুত কল্যাণপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠি দ্রুততম সময়ে মানুষকে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করায়। একই বছর আমি ‘রাহবার  নামে আরেকটি হাউজিং কোম্পানি শুরু করি, এখন দুটি প্রতিষ্ঠানেরই ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমি। ২০১২ সালে গার্মেন্টস সামগ্রী সরবরাহে ‘অলট্রেড’ নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করি। বলতে পারেন, ইনটেকের সাফল্য মানুষকে আমার বিভিন্ন কাজে আকৃষ্ট করে। যার মাধ্যমে আজ রিহ্যাবসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানে খুব পরিচিত।

ফখরুল বলেন,  আবাসন সেক্টরের আচরণ হচ্ছে পৃথিবীর সাথে আপনার মানিয়ে নিতে হবে। ২০২০ সালে এসে পৃথিবীর মানুষ যেমন উন্নত সুযোগ চায় তার বসতি এলাকায়, আপনাকে সেই মানসিকতার হতে হবে। নতুনদের অবশ্যই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। কারণ নতুন প্রতিষ্ঠান কাজ ভালো করলে মানুষের আস্থা বাড়বে। যারা এ সেক্টরে চাকরি করেন মানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, প্রজেক্ট ইনচার্জ, বিভিন্ন কাঁচামালের সরবরাহকারী সবার মধ্যে সমন্বয় করাটাও এ ব্যবসার একধরনের চ্যালেঞ্জ। সব কিছু নিয়ম মত হলে এ সেক্টরে ভালো না করার কোনো কারণ নেই।

দেশের আবাসন খাতের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ফ্ল্যাটের বিক্রি কমে যাওয়ায় এ খাতে বিনিয়োগ থমকে গেছে। বর্তমানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসলেও এ খাতের মন্দাভাব কাটেনি। অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এখাতে অর্থায়ন করা থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। অর্থনীতির সমৃদ্ধশালী এ বৃহৎ খাতটি পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি উদ্যোগ অপ্রতুল। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য একমাত্র আবাসন খাতের উন্নয়নই দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় যথেষ্ট।  এদিকে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণেও আবাসন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। আর মানুষের আয় বাড়লে আবাসন শিল্পের সম্ভাবনা তৈরি হয়।

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে যে আবাসন শিল্প গড়ে উঠছে সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন,  ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ থেকে একেবারে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত আবাসন শিল্পের এক বিশাল হাব তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতুকে ঘিরে। শুধু তাই নয়, পদ্মার ওপারেও মাদারীপুরের শিবচর এবং শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে একেবারে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত আবাসন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। আবাসন শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে মানুষের আয় বাড়তে শুরু করেছে, সামনে আরও বাড়বে। প্রাত্যহিক চাহিদা মিটিয়ে মানুষ নিজের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মাথাগোঁজার ঠাঁই খোঁজেন এবং এর জন্য বিনিয়োগ করেন। আর কেরানীগঞ্জ থেকে শুরু করে পদ্মার দুই পাড়ে আবাসন শিল্পে বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ সময় যাচ্ছে এখন।