সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
কিশোর-কিশোরীদের ভবিষ্যতের উপর কোভিড মহামারী দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তার করছে
কিশোর-কিশোরীদের ভবিষ্যতের উপর কোভিড মহামারী দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তার করছে

কিশোর-কিশোরীদের ভবিষ্যতের উপর কোভিড মহামারী দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তার করছে

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : June 01, 2022 | বাংলাদেশ

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ মহামারীকালীন সংকটে দীর্ঘসময় স্কুল বন্ধ থাকায় কিশোর-কিশোরীদের জীবনে বিভিন্নধরনের পরিবর্তন এসেছে। “অ্যাডোলেসেন্ট গার্লস ভালনারাবিলিটিজ অ্যান্ড ট্রানজিশান ইন দ্য কনটেক্সট অফ কোভিড-১৯” শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। 
কোভিড-১৯’র কারণে শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মনো-সামাজিক টানাপোড়ন, সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ- এমন বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে কিশোর-কিশোরীদের। কোভিডের সময়ে শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবক ও কিশোর-কিশোরীদের নেয়া সিদ্ধান্ত তাদের ভবিষ্যতের পথকে প্রভাবিত করবে। শুধু তাই নয়, তাদের জীবিকা এবং প্রজননস্বাস্থ্যও এর দ্বারা প্রভাবিত।  
০১ জুন ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইনে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বিশদ তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং জিআইজেড’র রুল অ ল প্রোগ্রাম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশান অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড) এবং ইউকে ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)’র সহায়তায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি সময়ের চাহিদারই প্রতিফলন। বাংলাদেশের সাথে উন্নয়নের অংশীদারিত্বের পঞ্চাশ বছর পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণে জার্মানি এইগবেষণার সহযোগী হতে পেরে গর্বিত। 
মিশ্র পদ্ধতির এই গবেষণাটি করা হয়েছিলো ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। কোভিড-১৯’র সংকট কিশোর-কিশোরীদের জীবনে কিভাবে পরিবর্তন এনেছে তা বিশ্লেষণ করা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে এদেশের নারী ও কিশোরীদের অবস্থা কেমন, বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা বোঝা ছিলো উক্ত গবেষণার লক্ষ্য।   
গবেষণা বলছে, ৩৫% কিশোর-কিশোরী মহামারীর আগে ৩-৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করতো। মহামারীর সময়ে কিশোর-কিশোরীদের এই হার ১৪ শতাংশে নেমে গেছে। যদিও কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার খুব একটা বেশি নয় তবুও, অন্তত ৩৫% ঝরে পড়া শিক্ষার্থী জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে তারা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে ১৬% ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরী জানিয়েছে, তারা পড়াশোনার খরচই আর চালাতে পারছে না।  
মহামারীর আগে ও পরে বাল্যবিবাহের হারে সামান্য ব্যবধান হয়েছে বলেও গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণায় অংশ নেয়া প্রায়৫০% পিতামাতা জানিয়েছেন, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে কোভিড-১৯’র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিলো। মেয়েদের ও তাদের পরিবারের সম্মানকে সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে-কোভিডের সময়ে প্রতিনিয়ত এমন সামাজিক চাপের মুখে ছিল কিছু পরিবার। ফলে সেসব পরিবারের পিতামাতারা তাদের মেয়েদের বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। 
সমীক্ষা অনুসারে, বাল্যবিবাহ এবং স্কুল ছেড়ে দেয়ার পেছনে দারিদ্র্যের চেয়েনিরাপত্তা এবং পারিবারিক সম্মান হারানোর ঝুঁকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্কুল বন্ধের প্রেক্ষাপটে ছেলেদের কাজে পাঠাতে অভিভাবকরা সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিবেচনাএবং কেবল দারিদ্র্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “কোভিডের সময়ে কিশোর-কিশোরীদের ব্যাপারে খুব একটা গবেষণা এবং নীতিনির্ধারণী আলোচনা হয় নি। অর্থনৈতিক কারণ ও স্কুল বন্ধ থাকা- এই দুইয়ে মিলে তাদের জন্য আগে থেকেই চলমান ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে এবং নতুন ঝুঁকির ক্ষেত্র তৈরি করেছে। আমাদের গবেষণা এবং আজকের আলোচনা থেকে আমরাএটাই দেখার চেষ্টা করেছি নীতি নির্ধারণে ও কর্মসূচী প্রণয়নে কিভাবে ব্যাপারটিকে তুলে ধরা যায়। অর্থনৈতিক সমস্যাকে পর্যালোচনা করা, শিক্ষার মানের উপর গুরুত্বারোপ করা এবং সামাজিকীকরণের শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে স্কুলকে গড়ে তোলা হতে পারে আমাদের নীতিগত অগ্রাধিকার।”