শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
আমরা এখনও কোন দলের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব পাইনি
মজিবুর রহমান মনজু

আমরা এখনও কোন দলের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব পাইনি

প্রকাশের সময় : June 13, 2022 | গণমানুষের কথা

রাজনৈতিক অস্থিরতা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, মুদ্রাস্ফীতিসহ দেশে বর্তমানে একটি অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদিকে আবার  পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে দেশের বৃহৎ একটি বাজেট ব্যয় হয়েছে। ইতোমধ্যে জনগণের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে সরকারের প্রতি কিছুটা নেতিবাচক ধারণা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামনে আবার ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ব্যস্ত সময় পার করছে। সর্বোপরি দেশের সার্বিক অবস্থা ও আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিষিদ্ধ’র মুখোমুখী হয়েছেন নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ ও এবি পার্টির  সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জু।

প্রতিষিদ্ধ:  আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এবি পার্টির ভাবনা কী?

মজিবুর রহমান মন্জু:  আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয় তাহলে এবি পার্টি তাতে অংশ নেবে। সেক্ষেত্রে যদি আমরা এককভাবে অংশগ্রহণ করি তাহলে ১০০ সিটে আর যদি জোটবদ্ধ  নির্বাচন করি তাহলে ৩০ সিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আমরা প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছি।

প্রতিষিদ্ধ: জামায়াত বা বিএনপির সঙ্গে কোন জোটে আসার ব্যপারে এবি পার্টির পরিকল্পনা কী?

মজিবুর রহমান মনজু: না এখনও আমাদের কোন সুস্পষ্ট পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করিনি। তাছাড়া কোন দলের কাছ থেকে আমরা এখনও কোন জোটের প্রস্তাবও পাইনি। আমরা এখন দলের নিবন্ধন ও নির্বাচনী এলাকা সমূহ যাচাই-বাছাই নিয়ে কাজ করছি। আপাততঃ এটাই আমাদের প্রাইওরিটি।

প্রতিষিদ্ধ:গত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট করার ক্ষেত্রে জামায়াত ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবার নির্বাচন কেন্দ্রীক এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে এবি পার্টি কী করবে?

মজিবুর রহমান মন্জু: নির্বাচন ও জাতীয় প্রয়োজনে বৃহত্তর ঐক্যের প্রসঙ্গ আসলেই এ জাতীয় ইস্যু বা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া নতুন নয়।  এবি পার্টি কোন মিশ্র প্রতিক্রিয়া বা বিভেদে জড়াতে চায় না। আমাদের দলের মূল বক্তব্য হচ্ছে মতবাদ বা মতাদর্শের উর্ধে উঠে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা। প্রত্যেকের নিজস্ব মতবাদ বা মতাদর্শ থাকবে কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রশ্নে অধিকার কে প্রাধান্য না দিলে কেউ বলবে আমি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সাথে বসবো না, কেউ বলবে বাম নাস্তিকদের সাথে বসবো না, আবার কেউ বলবে বাকশালী, মুনাফেক, বেদায়াতী, বাতেল ফেরকার সাথে কোন ঐক্য নাই। অতএব এই বিভক্তি দূর করা ছাড়া মতবাদ ভিত্তিক ঐক্য কোন ফল বয়ে আনবে না।

প্রতিষিদ্ধ: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বর্তমানে জাতির সংকট, দুটোর মধ্যে কোনটিকে আপনি মূখ্য হিসেবে দেখবেন?

মজিবুর রহমান মন্জু: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা অঙ্গীকার ভুলুণ্ঠিত করার মধ্য দিয়েই জাতির মূল সংকট তৈরী করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরী করা। কিন্তু স্বাধীনতার মূল স্থপতিরাই সেই চেতনায় কুঠারাঘাত করেছেন। তারা শুরু থেকেই বৈষম্যমূলক অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা করেছেন। ফলে জাতি আজ গভীর সংকটে নিপতিত হয়েছে। সুতরাং সংকট এখানে দুইটা না মূলতঃ একটা।

প্রতিষিদ্ধ: আগামী নির্বাচনে এবি পার্টির ইশতেহারে কোন বিষয়টি প্রধান্য পাবে?

মজিবুর রহমান মন্জু: দারিদ্র ও বেকারত্ব দূরীকরণ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধ, শিক্ষা খাতে বরাদ্ধ ৪ গুণ করা, সড়ক মহাসড়কে শৃংখলা ফিরিয়ে এনে দূর্ঘটনা রোধ, দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনা এগুলোকে আমরা প্রাধান্য দেবো।

প্রতিষিদ্ধ: বর্তমানে দ্রব্যমূল্য ও মানুষের আয়ের সমতা না থাকার অন্তরায় হিসেবে আপনি কী দেখছেন?

মজিবুর রহমান মনজু: এর প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও অর্থপাচার সর্বোপরি জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা না থাকা।

প্রতিষিদ্ধ: দলের নিবন্ধন ও প্রতীকের ব্যপারে এবি পার্টির পরিকল্পনা কী?

মজিবুর রহমান মন্জু: আমরা আগামী দুই মাসের মধ্যে দলের নিবন্ধনের আবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দেবো। নির্বাচন কমিশন যে ১০ টি শর্ত উল্লেখ করেছে ইতিমধ্যে ৭ টি শর্ত আমরা পূরন করে ফেলেছি। বাকী ৩ টি শর্তেরও প্রায় চল্লিশ ভাগ আগেই পুরণ হয়ে গেছে। আমরা আশাকরি কম সময়ের মধ্যে সব বিষয়গুলো সেরে ফেলতে পারবো। প্রতীকের ব্যপারে আমরা তিনটি সম্ভাব্য প্রতীকের নাম জমা দেবো। দলের প্রতিনিধি সম্মেলনে সেটাও আমরা স্থির করে ফেলেছি।

প্রতিষিদ্ধ: অন্যান্য দল থেকে এবি পার্টির আলাদা বৈশিষ্ট্যের ব্যপারে জানতে চাই।

মজিবুর রহমান মন্জু: এবি পার্টি একটি মূলধারার রাজনৈতিক দল। আমরা কোন মতাদর্শ, মতবাদ বা ধর্মভিত্তিক দল না। আমাদের আদর্শ হলো অধিকার। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা  কাজ করবো। মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রতিশ্রুতি সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের ৭ দফা কর্মসূচিকে সেবা ও সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমরা সাজিয়েছি। আমাদের দলে সরকারের মন্ত্রনালয়ের অনুরূপ একটি শ্যাডো কমিটি থাকবে, যারা গবেষনা ভিত্তিক দাবী ও সমস্যা সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরবে। আমাদের দলের সর্বপর্যায়ে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তিন মেয়াদের ( সর্বোচ্চ ৯ বছর) বেশী স্বীয় পদে আসীন বা নির্বাচিত হতে পারবেন না। আমরা জাতীয় নির্বাচনে ভোটের আনুপাতিক প্রকিনিধিত্বের হারে সিট বন্টনের রীতি প্রচলন করতে চাই।

প্রতিষিদ্ধ: নির্বাচন কালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এবি পার্টির অবস্থান কেমন?

মজিবুর রহমান মন্জু: আমরা মনেকরি দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কখনোই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি। নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যপারে ১৯৯০ সালে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য ছিল। অতএব ১৯৯০ এর রূপরেখার আলোকে আমরা নির্বাচন কালীন অন্তবর্তীকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।

প্রতিষিদ্ধ: বর্তমানে সরকারের কী কী পদক্ষেপের ব্যপারে এপি পার্টির সন্তোষ বা অসন্তোষ?

মজিবুর রহমান মন্জু: বর্তমান সরকারের কোন কার্যক্রমেই সন্তোষ প্রকাশ করার কোন সুযোগ নেই। আপনার নিজের বাড়ী জোর করে দখল করে সব অর্থ সম্পদ লুট করে কেউ যদি আপনাকে সুস্বাদু কাচ্চি বিরানী খাওয়ায় তাতে কি আপনি সন্তুষ্ট হবেন?  এই সরকার জোর করে অবৈধ পন্থায় নিজেরা ক্ষমতায় চেপে বসেছে এবং প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র সম্পদ লুটপাট করে জনগণের অধিকার ভূলুন্ঠিত করছে। এই সরকার দ্রুত পদত্যাগ করে অন্তবর্তীকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে জাতি সন্তুষ্ট হবে।

প্রতিষিদ্ধ: আপনাকে অসংখ্য  ধন্যবাদ।

মজিবুর রহমান মন্জু: প্রতিষিদ্ধ’কেও অসংখ্য ধন্যবাদ।