রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
গ্রাহক প্রতারণার অভিযোগে যমুনা লাইফের ৩ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি
গ্রাহক প্রতারণার অভিযোগে যমুনা লাইফের ৩ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি

গ্রাহক প্রতারণার অভিযোগে যমুনা লাইফের ৩ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি

বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : September 19, 2022 | বীমা

জীবন বীমা কোম্পানি যমুনা লাইফ ইনসুরেন্সের গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে কোম্পানিটির চট্টগ্রাম মডেল সার্ভিস সেন্টারের বীমা উন্নয়ন বিভাগের ৩ কর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যমুনা লাইফ সূত্রে জানা যায়, ঘটনা সকলের সামনে আসার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে অভিযুক্ত তিন ব্যক্তি।  
বরখাস্তরা হলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রাম মডেল সার্ভিস সেন্টারের ইনচার্জ ও উন্নয়ন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (উন্নয়ন) মোঃ আতিকুর রহমান ও মিসির রায়হান।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, ৯৩ জন গ্রাহকের নিকট থেকে প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট) হিসাব খোলার কথা বলে আদায় করে তারা প্রত্যেক গ্রাহকের টাকা ২১ বছর মেয়াদী (২১ কিস্তির ১ম কিস্তি) বীমা হিসেবে কোম্পানির নিকট জমা করে। এর কারণ হিসেবে যমুনা লাইফের পক্ষ থেকে বলা হয়  এফডিআর হিসাব খুললে উন্নয়ন বিভাগের বীমা কর্মীরা খুব সামান্য কমিশন পান। এর মুনাফা নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী গ্রাহকরা পেয়ে থাকেন। কিন্তু কোন বীমা কর্মী যদি কোন গ্রাককে দীর্ঘ মেয়াদী বীমা করান তাহলে ১ম কিস্তির ৮৫ শতাংশ ও অন্যান্য সকল কিস্তি থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে কমিশন পেয়ে থাকেন। যাতে বীমা কর্মীর এক কালীন খুব মোটা অংকের একটি লাভ হয়। তাছাড়া বীমার মেয়াদের শেষ পর্যন্ত কমিশন তো আছেই। 
যমুনা লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হাসান খন্দকার জানান, অভিযুক্ত প্রতারকরা নিজেদের অতিরিক্ত লাভের আশায় নিজেরা ভূয়া রশিদ ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে গ্রাহকদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে। 
যমুনা লাইফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন জানান, তারা নিজেরা গ্রাকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রধান কার্যালয়ের কিছু উর্ধ্বতন কর্মকাতার ঘাড়ে এ প্রতারণার দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। এদিকে তারা উক্ত টাকা ও গ্রাহকের অন্যান্য প্রমাণাদি কোম্পানিতে জমা করে ঠিক সময়ে কমিশনও নিয়ে গেছেন। তাছাড়া তারা উন্নয়ন বিভাগের কর্মী হওয়ার তাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে কোন বেতন দেয়া হয় না। তারা শুধু আইন অনুযায়ী কমিশনে কাজ করেন। এদিকে তাদের প্রতারণার কারণে গ্রহকরা উভয় সংকটে রয়েছেন বলেও তিনি জানান।
এ ঘটনায় যমুনা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কামরুল হাসান খন্দকার রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কামরুল হাসান জানান সম্প্রতি নামে বেনামে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক নামে আইডি ও গ্রুপ খুলে যমুনা লাইফের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যার কারণে কোম্পানির সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। অপকর্মের জেরে বরখাস্ত হওয়া ৩ কর্মকর্তা তাদের দায় এড়াতে এবং কোম্পানির প্রতি প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নিয়েছে দাবি করেন তিনি। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সাধারণ ডায়েরিতে অপপ্রচারকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি এবং আরও যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়। বরখাস্তকৃত এ ৩ কর্মকর্তা ভূয়া বিভিন্ন আইডি থেকে যমুনা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির বিভিন্ন কর্মকর্তাকে মেসেজ দিয়ে হুমকিও দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে । 
এ বিষয়ে যমুনা লাইফ ইনসিওরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কামরুল হাসান খন্দকার জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। তাদের সাথে কোন প্রকার লেনদেন না করারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
তবে বরখাস্ত চট্টগ্রাম মডেল সার্ভিস সেন্টারের ইনচার্জ ও উন্নয়ন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীকে ফোন করলে তিনি প্রথমে কল অন রেকর্ডে কথা বলতে রাজি হননি; পরে রেকর্ড ছাড়া ফোন করলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে আর কথা বলেননি। 
ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (উন্নয়ন) মোঃ আতিকুর রহমানকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 
বরখাস্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (উন্নয়ন) মিসির রায়হানকে ফোন করা হলে তিনি জানান, ৯৩ জন গ্রাহকের পুরো কমিশন আমরা গ্রহণ করিনি, তবে আমরা যা বীমা করিয়েছি ততটুকু আমরা কমিশন নিয়েছি। ৯৩ গ্রাহকের বীমার কমিশন আমরা নিয়েছি সেটি হেড অফিসের কাছে চাইলে তারা প্রমাণ করতে পারবে না।