শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
বিরলে মাকে ২ সন্তানের লাশ দেখতে দিলো না গ্রামবাসী
লাশ দুটি এ নজর দেখের জন্য শত শত নারী পুরুষ দাদা রফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভীড় করেন

বিরলে মাকে ২ সন্তানের লাশ দেখতে দিলো না গ্রামবাসী

দিনাজপুর প্রতিনিধি 
প্রকাশের সময় : November 26, 2022 | রংপুর

দিনাজপুরের বিরলে ভবানীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত কক্ষে থেকে উদ্ধারকৃত সহোদর ২ ভাইয়ের লাশ ময়না তদন্ত শেষে বিরল উপজেলার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে । শনিবার যোহরের নামাজ শেষে  শিশু ইমন হাসান (৭)  ও ইমরান হাসান (৩) এর লাশ দাফন করা হয়।

দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ মর্গে দুই শিশুর ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট ২ শিশুর লাশ হস্তান্তর করা হয়। শিশু দুটির দাদা রফিকুল ইসলাম নাতিদের লাশ গ্রহণ করেন। পরে নিজ  বাড়ি বিরল উপজেলার শংকরপুর গ্রামে ঘোড়াপীর পাড়ায় নিয়ে যান । লাশ দুটি এ নজর দেখের জন্য শত শত নারী পুরুষ দাদা রফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভীড় করেন। শিশু দুই ভাইয়ের লাশ দেখে উপস্থিত সকল নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশুরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন । 

শিশু দুটির মা উম্মে কুলসুম ঢাকা থেকে এসে একবার দেখার জন্য গ্রামের বাড়ীতে আসলে স্থানীয়রা শিশু দুটির মাকে তাকে তাড়িয়ে দেয়। শেষ বারের জন্য একনজর দুই পুত্রের লাশ দেখার জন্য হাউমাউ করে কান্না করলেও গ্রামবাসীরা তার মাকে দেখতে দেয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাবা-মা দুজনই ওই শিশুদের খুনি। তাদের লাশ দেখার কোনো অধিকার মা-বাবার নেই।

অপরদিকে, গ্রামবাসীরা বলেন, শিশু দুটিকে তাদের মা-বাবা এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে দিলো না। একদিকে ২শিশুকে বিষ খাইয়ে হত্যার ঘটনায় বাবা শরিফুল ইসলাম ও মা উম্মে কুলসুম মানসিক ভাবে যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করেছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে এলাকাবাসী ।

স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, গ্রামে থাকায় অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া মারামরি লেগেই থাকতো। অনেকবার তাদের বোঝানো হয়েছে যে তোমাদের দুটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়েছে। তাদের দেখে একে অপর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও । তারা আমাদের কথা শুনত না। বাচ্চাদের হত্যার পেছনে তারা দুজনই জড়িত। তাই দুইজনের ফাঁসি চাই আমরা।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দীন (অপরাধ)  বলেন, দুই শিশুকে হত্যার ঘটনায় বাবা শরিফুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে শুক্রবার রাতেই মা উম্মে কুলসুম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই বিরলের মঙ্গলপুর নামক স্থান থেকে শরিফুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য যে , দীর্ঘদিন ধরে শরিফুলের সঙ্গে উম্মে কুলসুমের পারিবারিক বিরোধ চলছিলো। এর জের ধরেই ১ মাস আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর স্ত্রী ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। ছাড়াছাড়ির পর থেকে সন্তানদের নিয়ে তাদের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শরিফুল ও তার ২ ছেলে নিখোঁজ ছিল। শুক্রবার সকালে শরিফুল স্বজনদের ফোন দিয়ে সন্তানদের বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন বলে জানান। পরে ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ঘর থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

প্রতিষিদ্ধ/দিনাজপুর/এসএম