রবিবার, মে ৫, ২০২৪
দেশত্যাগের আগে প্রবাসগামীর বীমা আছে কী না সেটি যাচাই করা উচিত
এস এম জিয়াউল হক

দেশত্যাগের আগে প্রবাসগামীর বীমা আছে কী না সেটি যাচাই করা উচিত

প্রকাশের সময় : June 15, 2022 | বীমা

এস এম জিয়াউল হক

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড

এস এম জিয়াউল হক বীমা খাতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তরুণ গতিশীল পেশাজীবী ব্যক্তিত্ব। তিনি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বর্তমানে চার্টার্ড লাইফ উদ্ভাবনী পণ্য ও সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে বীমা খাতে কাজ করছে। জিয়াউল আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে (অ্যালিকো) একজন ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন যা বর্তমানে মেটলাইফ নামে পরিচিত। তিনি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডে যোগদানের আগে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশনস) হিসেবে কাজ করেছিলেন। যেখানে তিনি গ্রুপ অপারেশন, দাবি ও গ্রাহক অভিজ্ঞতা, এবং আর্থিক পরিষেবা সরবরাহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ইনোভেশন অ্যান্ড অল্টারনেটিভ ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের (এডিসি) নেতৃত্বেও ছিলেন। চার্টার্ড লাইফ ব্যাংক, বীমা, টেলিকম, পাওয়ার, রিয়েল এস্টেট, ট্যুরিজম, প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, অবকাঠামো, কেমিক্যাল, রেডিমেড গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানীর সাথে কাজ করে। চার্টার্ড লাইফ দেশের সর্বাধিক মানুষের জীবন বীমা ও জীবনধারা নিরাপদ করার স্বপ্ন নিয়ে তার ব্যবসা শুরু করে। বিশ্বব্যাপী মানসম্মত পরিষেবার সঙ্গে সব শ্রেণীর মানুষের কাছে তাদের জীবন আর্থিকভাবে সুরক্ষিত নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রা শুরু করে চার্টার্ড। 
সম্প্রতি ৩য় বীমা দিবসে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে তিনি প্রতিষিদ্ধের সঙ্গে কথা বলেন। 
বীমা দিবসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো বীমা ব্যবস্থা আমাদের দেশেও চালু হোক সেটাই আমরা চাই। কেউ যেন দুই নম্বরী করতে না পারে সেটাও দেখতে হবে। তার (বীমাকারী) টাকাটা যেন পান, কোন হয়রানির শিকার যেন না হয়। এই সেবাটা যদি মানুষ হাতের কাছে পায় তাহলে অনেকে কিন্তু তার জীবনে নিশ্চিন্ত হতে পারবে। সেজন্য সরকারি-বেসরকারি বীমা কোম্পানীগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে বীমার বিষয়টি আরও ভালোভাবে প্রচার হওয়া দরকার বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, এ ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বাড়তে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। না করলে কী ক্ষতি হতে পারে, আর করলে কী লাভ হতে পারে। এগুলো মানুষের কাছে আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে। জনগণকে আরও উৎসাহিত করতে হবে। এটাই আমার একটা অনুরোধ থাকবে।
মিথ্যা ঘটনা রটিয়ে বীমা কোম্পানী থেকে টাকা নিতে চাওয়া প্রতারকদের সর্তক করেন শেখ হাসিনা।  বলেন, এখানে আমি একটা বিষয় বলব যেটা আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি। একটা ঘটনা বলি - পাটের গুদামে হঠাৎ আগুন লেগে যেত, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সব পাট নাকি পুড়ে যেত। তখন বীমা থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা নিত। তো একবার এটা খোঁজ করে দেখা গেল আসলে মালিক পাট বিক্রি করে আগুন লাগিয়ে দিত। এরপরে একটা বিশাল অঙ্কের টাকা দাবি করে বসতো। একই ঘটনা আমি পেয়েছি গার্মেন্টস সেক্টরেও।
 
এখন পর্যন্ত বীমা শিল্পে কী ধরণের অগ্রগতি হয়েছে জানতে চাইলে এস এম জিয়াউল হক বলেন, বীমার অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি। তবে বর্তমান সরকারের যে বিভিন্ন উদ্যোগ, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও আইডিআরের (বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ) সমন্বয়ে প্রবাসীদের জন্য বীমা, শস্য বীমা, কৃষি বীমা, প্রতিবন্ধীদের জন্য বীমা বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা এবং সর্বোপরি ব্যাংক ইন্টারেস্টসহ গৃহীত উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আশা করছি বীমা শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে।দেশত্যাগের আগে প্রবাসগামীর বীমা আছে কী না সেটি যাচাই করা উচিত এবং বেসরকারি কোম্পানীগুলোকে ও এই বিষয়ে নজর দেয়া উচিত যাতে করে প্রবাসগ্রামীরা উপযুক্ত বীমা সেবার আওতাধীন হতে পারে।
বীমা খাতের অগ্রগতির জন্য কোন দিকটিতে নজরদারি দরকার জানতে চাইলে এস এম জিয়াউল হক বলেন, বিগত দিনে বীমা খাত পিছিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় কারণ ছিল এক কোম্পানীর দক্ষ কর্মীকে ছাড়পত্র ছাড়াই আরেক কোম্পানী বড় অফার দিয়ে নিয়ে যেত। এমনকি এক কোম্পানীতে দুর্নীতি করার পরও অন্য কোম্পানীর বিশাল বিশাল দায়িত্বে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া কিছু কোম্পানী ১০০ টাকা প্রিমিয়াম আনতে গিয়ে ১৫০ টাকা খরচ করেছে। যেকোনো লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী প্রথম ১০ থেকে ১২ বছর প্রিমিয়াম গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে আসে। সুতরাং অন্তত ১০ বছর আগে তার টাকা ফেরত দেয়া লাগছে না। ওই কোম্পানীগুলো যদি মনে করে, ১০ বছরে যা প্রিমিয়াম পেয়েছি, সব আমার টাকা, তারা যদি অনিয়ন্ত্রিত ব্যয় করে ফেলে, সে কোম্পানী মেয়াদ শেষে গ্রাহকের দাবি কীভাবে পরিশোধ করবে! এ ধরনের কিছু কোম্পানীর কারণে বাজারে কিছুটা অস্থিতিশীলতা রয়েছে। যেসব কোম্পানী বর্তমান দাবি পরিশোধে দীর্ঘসূত্রতা করছে, তাদের কঠোর হাতে নজরদারি করতে হবে। এজন্য সরকার ও আইডিআরকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।
দেশের বীমাখাতের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এস এম জিয়াউল হক বলেন, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এই তিন,চার গুন ব্যবসায় এগিয়ে যাওয়ার মূল বিষয়টি হচ্ছে আমরা প্রম্প্ট সার্ভিস নিশ্চিত করছি। বীমা গ্রহীতারা তাদের অ্যাপসে দেখছে, পোর্টালে দেখছে, কবে ক্লেইম পাবে, কখন পলিসি মেচিউরড হবে। গ্রাহক নিজেই কিন্তু অত্যন্ত ট্রান্সপারেন্সির মাধ্যমে এটা বুঝতে পারছে। তাহলে এই দুটো সেবা যখন নিশ্চিত করতে পারব। তখন মানুষের মধ্যে একটা ট্রাস্টের জায়গা তৈরি হবে। এর সাথে যদি আমরা প্রোডাক্ট ডাইভারসিটি আনতে পারি, যেমন বিভিন্ন ধরনের নতুন প্রোডাক্ট স্বাস্থ্য বীমা, পেনশন বীমা। যেহেতু সরকারি ক্ষেত্রে পেনশন আছে প্রাইভেট সেক্টরে পেনশন, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী ইনসিওর করতে পারবে। এরপর বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্প, দেনমোহর বীমা, হতে পারে এই যে বিভিন্ন ডাইভারসিটি প্রোডাক্ট আমরা যদি নিয়ে আসতে পারি মানুষের কাছে। তাহলে মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি হবে, তারা সঞ্চয়ী হবে তার সঞ্চয়ের পোর্টফোলিওর একটা পার্ট তারা ইন্স্যুরেন্সে জমা দিবে। ইন্স্যুরেন্স এর মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে, তার মাধ্যমে প্রাইভেট সেক্টর থেকেও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে করে মানুষের মধ্যে বীমার আস্থার জায়গা তৈরি হয়, সেবার জায়গা তৈরি হয় এবং সেই সাথে ওয়ার্ড অফ মাউথ এর মাধ্যমে আমাদের ঘরে ঘরে এই জীবন বীমা পৌঁছে যায়। এটাই চার্টার্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিকল্পনা। চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স এই স্বপ্নই বিশ্বাস করে। 
এস এম জিয়াউল হক বলেন, এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ক্যাপটিভ মডেলের সাথে সাথে অন্যান্য ডিস্ট্রিবিউশন মডেল চালু করতে হবে। প্রোডাক্ট পরিকল্পনা ও পদ্ধতি সহজতর করতে হবে। ব্র্যান্ড ভ্যালু, বীমা সেবার পরিমাণ এবং গুণগতমানসহ সকল দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গ্রাহকদের একাধিক ধরনের বীমা নিরাপত্তা প্রদান করা। নতুন নতুন প্রোডাক্ট উদ্ভাবন যেমন- জীবন, স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনা, শস্য, গবাদিপশু, ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে নতুন পরিকল্পের মাধ্যমে বীমা সেবার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। উপযুক্ত পেমেন্ট ম্যাকানিজমের সাথে আপসেল করা। বীমা খাতে ইমেজ ফেরাতে আমরা যথাসময়ে গ্রাহককে তার প্রাপ্য টাকা ফেরত দিচ্ছি। সব ধরনের সেবা ডিজিটালাইজড করেছি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করছি।
বাংলাদেশে স্বচ্ছ কর্পোরেট গভর্নেন্স সম্পর্কে জানতে চাইলে এস এম জিয়াউল হক বলেন, বাংলাদেশে করপোরেট গভর্ন্যান্সআলোচনায় নিয়ে আসতে এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট গুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন পরে গেজেটের মাধ্যেমে ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড’ চালু করে (দেখুন আগস্ট ৭, ২০১২ এবং তার পরবর্তী প্রাসঙ্গিক নোটিফিকেশনগুলো)। এখানে পশ্চিমা আদলে সুশাসনের বিভিন্ন ধারা আছে: বোর্ড অব ডিরেক্টর কয়জন হবে, কারা হবে (যেমন ন্যূনতম এক অংশ হবে ইনডিপেনডেন্ট), ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টরের যোগ্যতা, বোর্ডের প্রধান ও সিইও আলাদা ব্যক্তি হবে, বোর্ড অব ডিরেক্টরের শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কী রিপোর্ট দেবেন, বোর্ড বছরে কয় দিন মিটিং করবে, অডিট কমিটির কী গুরুত্ব ইত্যাদি। এসব ইতিবাচক পদক্ষেপ। অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন দেশে এসব করপোরেট গভর্ন্যান্স কোডের সঙ্গে কোম্পানীর আয় ও শেয়ারের মূল্যমানের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পাওয়া যায়। তাছাড়া করপোরেট মুনাফার রিপোর্টে বিভিন্ন লুকাছাপা (যেমন আর্নিংস ম্যানেজমেন্ট বা লাভ-লোকসানের খতিয়ানে অপকৌশল) কমে আসার প্রমাণ মিলে। তো অনেকাংশে বলতে পারেন বারলে, মিন্স, কোজ, জেন্সেন, মেকলিং যে ম্যানেজারদের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিপরীতে পুঁজির ব্যবহার, বণ্টন, বিনিয়োগ নিয়ে আশঙ্কা করেছিলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্সের কোড বা তার কিছু অংশ তা কমায়। তবে আলোচনা এই জায়গায় থেমে থাকলে করপোরেট পুঁজির অপব্যবহার রোধ করা পুরোপুরি সম্ভব নয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, যেসব উন্নয়নশীল দেশ আমেরিকা, ইউরোপের অনুসরণে করপোরেট সুশাসনের ধারণা ও তত্ত্বের ভিত্তিতে করপোরেট সুশাসন চালু করেছে, তাদের কিছু গোড়ার কথা, মৌলিক বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে; আবার নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও ভুললে চলবে না। তত্ত্বকে আমাদের পরিচালিত করতে না দিয়ে, বরং আমাদের নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী তত্ত্বকে কাজে লাগাতে হবে।