শনিবার, মে ৪, ২০২৪
অর্থ আত্মসাত ও নিয়োগ বাণিজ্যে জর্জরিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
অর্থ আত্মসাত ও নিয়োগ বাণিজ্যে জর্জরিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

অর্থ আত্মসাত ও নিয়োগ বাণিজ্যে জর্জরিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : October 13, 2022 | শিক্ষাঙ্গন

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। সারাদেশের এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভরশীল। নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, নিয়মবহির্ভূত পদোন্নতিসহ রয়েছে বেশকিছু অভিযোগ উঠেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহর বিরুদ্ধে। এছাড়া উপাচার্যের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের নিজ বাসায় নৈতিক স্খলনজনিত একাধিক অভিযোগ আরো আগের। কিছুদিন আগে উপাচার্যের দেওয়া সব নিয়োগ-পদোন্নতি ইউজিসি থেকে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে উপাচার্য আহসান উল্লাহকে অপসারণেরও সুপারিশ করা হয়েছে উক্ত প্রতিবেদনে। তবে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে উপাচার্য দাবি করেন, পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরির জন্য এসব শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, নিয়োগ হওয়ার পর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন তার নিজের এলাকা চট্টগ্রাম থেকে। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করেছেন উপাচার্য। অধিকাংশ সময় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই নিয়োগ দিয়েছেন তার নিজের মনোনীত প্রার্থীকে। এছাড়াও নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিকট থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। ৫-১০ লাখ টাকা করে নিয়েছেন কর্মচারীদের থেকে। ৫২ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১১২ জনকে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি যেহেতু ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে সেখানে বাড়িভাড়ার নামে ভিসি লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
ভিসির ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার আবু হানিফ এসব অনিয়মে উপাচার্যকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া সিন্ডিকেট সদস্য ও ভবানীপুর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. হাসান মাসুদসহ আরও কয়েকজন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ বলে তাদের দ্বিতীয় দফায় সিন্ডিকেট সদস্য করা হয়।
এদিকে প্রথম দফায় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম নিয়ে গঠিত ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটিতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এরপর দ্বিতীয় দফার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পায় ইউজিসি। দ্বিতীয় দফার কমিটিতে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্রসহ  আরো পাঁচ সদস্য ছিলেন।
দ্বিতীয় দফার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দীন এসব অনৈতিক ও অবৈধ নিয়োগের বিরোধিতা করায় তাকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়া হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে জালিয়াতির জন্য অবৈধভাবে ‘নিয়োগ কমিটি’র বাইরে আলাদা প্রশ্নপত্র করা হয়। এছাড়া অবৈধভাবে এক লাফে ১৩ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বানানো হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইন অনুযায়ী ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোকে গড়ে তোলা হলেও অপ্রয়োজনে পছন্দের বেশ কয়েকজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয় উপাচার্য। নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানতে চাইলে প্রশ্ন মডারেটর ও প্রণয়নের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় বলে দাবি করেন উপাচার্য। এছাড়া নিয়মে বহির্ভূত ভাবে অধীনস্থ বিভিন্ন মাদরাসায় বিভাগ খোলার অনুমোদন দেওয়া হয় বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়।
এর আগে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন সাব্বির আহমেদ মমতাজী। তার সংশ্লিষ্টতায় মূলত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হন আহসান উল্লাহ। মমতাজীর বিরুদ্ধেও নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল। ক্ষমতাবলে তিনি নিজের ছেলে-মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এসব অভিযোগেরও প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি।
প্রতিবেদনের সুপারিশে দাবি করা হয়েছে, উপাচার্য আহসান উল্লাহর দেওয়া ১১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা। তবে যারা ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। সিন্ডিকেট সদস্যের যারা উপাচার্যের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তাদের বাদ দিয়ে বর্তমান সিন্ডিকেট ভেঙে নতুনভাবে গঠন করা ও আহসান উল্লাহকে অপসারণ করে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া।
এ ব্যপারে ইউজিসির চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। অনিয়ম প্রমাণ হওয়ায় উপাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। উক্ত সুপারিশ অনুয়ায়ী যথার্থ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।