মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০২৪
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পুরস্কার পেল ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টারস মেন’
এই অনন্য সাধারণ অনুসন্ধান বাংলাদেশে তীব্র আলোড়ন তৈরি করে এবং সর্বোচ্চ স্তরের ক্ষ্মতাশালীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করে

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পুরস্কার পেল ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টারস মেন’

প্রতিষিদ্ধ প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : November 03, 2021 | শীর্ষবিন্দু

এই অনন্য সাধারণ অনুসন্ধান বাংলাদেশে তীব্র আলোড়ন তৈরি করে এবং সর্বোচ্চ স্তরের ক্ষ্মতাশালীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করে

শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্র হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ডিআইজি পুরস্কার পেয়েছে আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের তৈরি “অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার’স মেন”। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত “অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার’স মেন” দীর্ঘ অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র বিভাগে এ পুরষ্কার পেল। তথ্যচিত্রটিতে বাংলাদেশের উচ্চতম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মারাত্মক দুর্নীতির বিস্তারিত চিত্র উন্মোচিত হয়।

 ডিআইজি বিচারকেরা বলেন, এখানে অবিশ্বাস্য দুর্নীতির চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। এই তথ্যচিত্র দর্শককে একদম ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়, যেখানে ক্ষমতার নগ্ন অপব্যবহারগুলো ঘটেছে। সংগঠিত অপরাধ সম্পর্কে গোপন তথ্য ফাঁসকারী সাহসী এক ব্যক্তির সুবাদে এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা দলের সুদক্ষ অনুসন্ধানে অপরাধে জড়িত রাঘব-বোয়ালদের খোঁজ বেরিয়ে আসে। আমরা দেখতে পাই, রাষ্ট্রটি কিভাবে সুসংগঠিত অপরাধ ও দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। এই অনন্য সাধারণ অনুসন্ধান বাংলাদেশে তীব্র আলোড়ন তৈরি করে এবং সর্বোচ্চ স্তরের ক্ষ্মতাশালীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করে।

ডিআইজি আরও মন্তব্য করে, এই তথ্যচিত্রে দেখান হয়েছে কীভাবে সংগঠিত অপরাধ পরিচালনাকারী একটি পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত থেকে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে পুরো রাষ্ট্রকে কবজা করে রেখেছে।  

বিশ্বের নামকরা সব সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করে পুরস্কার জিতেছে আল জাজিরার এই তথ্যচিত্র। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অন্যান্য তথ্যচিত্রের মধ্যে ছিল বিবিসি নির্মিত “দ্য বেইবি স্টিলার”। পুরস্কার দেয়া হয় গত ৩ অক্টোবর।

মূল তথ্যচিত্র ছাড়াও এর নির্মাণ প্রক্রিয়া ও ভেতরের গল্প নিয়ে যে পডকাস্ট প্রকাশিত হয়েছিল, সেটিও পুরস্কৃত হয়। পডকাস্ট সম্পর্কে বলা হয়, “অনুসন্ধান কাজের বিভিন্ন আকর্ষণীয় দিক, ঘটনার গভীরে যাবার সাহসিকতা, পটভূমি বর্ণনার যে সুউচ্চ মান এবং এর চমৎকার শব্দ ধারণ ও সম্পাদনা — তা [পডকাস্টে] উঠে এসেছে”।  

পুরস্কার প্রদানকারী সংগঠন ডিআইজির নামের পূর্ণাঙ্গ রূপ “দকুমেনতারি, ইনচ্যাইস্তে, জোরনালিজমি” (তথ্যচিত্র, অনুসন্ধান, সাংবাদিকতা)। ডিআইজি ২০১৫ সাল থেকে একটি পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। সংস্থাটি উঁচু মানের অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন তৈরিতে নিযুক্ত সাংবাদিকদের দক্ষতা বিচারের একটি মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একটি বিবৃতিতে আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (এজেআই) জানায়, “অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার’স মেন” এই পুরস্কার পাওয়ায় তারা অত্যন্ত আনন্দিত। তথ্যচিত্র নির্মাতারা উল্লেখ করেন, এই পুরস্কারের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারকমণ্ডলী বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে, যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চরমভাবে সীমিত এবং মানবাধিকার ভায়াবহ অবস্থায় আছে, সেখানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে এজেআই [অপরাধের] তথ্য ফাঁসকারী ব্যক্তিদের সাহসিকতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চায়; কারণ তারা এই অনুসন্ধানে অনেক বেশি অবদান রেখেছেন।

আল জাজিরা ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট নির্মিত তথ্যচিত্রে বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মানুষদের মারাত্মক দুর্নীতির চিত্র ফাঁস হয়েছিল। এতে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং খুনের দায়ে দণ্ডিত তার দুই পলাতক ভাই। অনুসন্ধানে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উচ্চ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদেরও সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।